জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বর্তমান প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে গেলো নতুন প্রক্টর পদে নিয়োগের ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতা। প্রশাসনিক আঙ্গিনায় নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ডজন খানেক শিক্ষক এ পদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাপ দিচ্ছেন বলে গুঞ্জন ওঠেছে।
সোমবার (০৬ নভেম্বের) দায়িত্ব শেষ হতে যাচ্ছে বর্তমান প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি নানা সময় বিতর্ক ও আলোচনায় জড়িয়েছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী এ পদে নতুন কাউকে ভাবছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে শূন্য এ পদে নিয়োগ পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পদ প্রত্যাশী শিক্ষকমহল। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যই প্রক্টর পদে নতুন নিয়োগ পেতে এত তোরজোড় যা পূর্বে এত প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
সম্ভাব্য নিয়োগ পাওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় এগিয়ে আছেন বেশ কয়েকজন নবীন-প্রবীণ শিক্ষক। যাদের কারো করো এই দায়িত্ব পালনের পূর্বঅভিজ্ঞতাও রয়েছে,অবার অনেকেই নতুন। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে চলমান অস্থিরতার এ সময়ে প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে আসীন হতে ইতোমধ্যেই জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে সব জল্পনা ছাপিয়ে এ পদে নিয়োগ পেতে বড় আগ্রহের কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের ৩০০ কোটি টাকার টেন্ডার এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকা।
পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থিক অনিয়ম নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের বিষয়ে জানা যায়, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে দেনা-পাওনার বিষয়টি সমন্বয় করেন প্রক্টর। এর আগে ২০১৯ সালে উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ছাত্রলীগের ২ শতাংশ চাঁদাবাজি ও অন্যান্য নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনে বর্তমান প্রক্টরের নাম আলোচনায় ছিল।
এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী সময় প্রক্টর কে হচ্ছেন তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে জোর আলোচনা। এ দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রক্টর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনি হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। আরো আলোচনায় আছেন শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ, সহকারী প্রক্টর ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দিন সিকদার। প্রক্টরের অনুপস্থিতিতে খণ্ডকালীন দায়িত্বেও তিনি বেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া তালিকায় আছেন পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। তিনি এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া রয়েছেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আওলাদ হোসেন এর আগে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া প্রক্টর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া। সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি আ ফ ম কামাউদ্দিন হলের ওয়ার্ডেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে আইবিএ ভবন নির্মাণকাজে গাছ কাটায় টানা তিন দিনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অনেকটাই উত্তপ্ত। এই পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে কোনো আন্দোলন মোকাবিলায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে প্রক্টরকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা- শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ কাউকে এ পদে নিযুক্ত করা হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবলা,শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় একনিষ্ঠ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখবে এমন কাউকে জাবির প্রক্টর হিসবে প্রত্যাশা করেন বলে দাবী শিক্ষার্থী এবং বিশ্বিবদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।