শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধা-৩: মনোনয়নযুদ্ধে মাঠে একাধিক নেতা

আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে নিজেদের ইচ্ছা প্রকাশ করায় গাইবান্ধায় রীতিমতো মনোনয়নযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা। আর দল নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির একাধিক নেতা ভোট যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে প্রার্থিতার লড়াই শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। বড় দুই দলেই প্রার্থিতার লড়াই উঠেছে তুঙ্গে।

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে ততই আলোচনা। গাইবান্ধায় জাতীয় সংসদের ৫টি আসন রয়েছে। গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাাপুর) আসনের রাজনীতি মূলত নৌকা, লাঙ্গল আর ধানের শীষেই ঘুরপাক খায়। তবে জামায়াতের ভিন্ন রাজনৈতিক কৌশলে অনেকের কপালেই পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এক সময় জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধা-৩ আসনে পালাবদল ঘটে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ আসনে টানা ছয় বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীকে ২০১৪ সালে পরাজিত করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইউনুস আলী সরকার। এরপর থেকেই নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে আসনটি ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তবে রাজনীতির মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকলেও অন্তকলহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দলটি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতাকর্মীরা এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভ‚ত হয়েছে। তবে এটিকে দলীয় কোন্দল বা বিভক্তি নয় বরং নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হিসেবেই দেখছেন দলটির স্থানীয় নেতারা।

অন্যদিকে মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্ক কাটিয়ে এখানকার রাজনীতির মাঠে এখন সাংগঠনিক তৎপরতায় বিএনপি অনেকটাই সুসংগঠিত। রাজনীতির মাঠের বিপর্যয় কাটিয়ে নতুন কৌশল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য পুরো প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে দলটি। যেন প্রতিপক্ষ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে। এমনটি জানিয়েছেন দলটির নেতারা। অপরদিকে জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে চলছে টানাপড়া। এ ছাড়া দলটির দুই শীর্ষ নেতা রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরের ঐক্যে ফাটল ধরায় জাপার স্থানীয় নেতৃত্বের মাঝেও এর প্রভাব পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সুপারি খোলে স্বপ্ন বুনছে লক্ষীপুরের মামুনুর

গাইবান্ধায় ইসলামি দলগুলোর কোনো কর্মসূচি তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে জামায়াতে ইসলামীর দৃশ্যমান কোনো সাংগঠনিক কর্মকান্ড না থাকলেও ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে তারা। রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এবার এককভাবে নির্বাচন করতে চায় দলটি। সে লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে এ আসনে নিজেদের একক প্রার্থী ঠিক করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এছাড়াও সিপিবি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি এবং কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগসহ ছোট দল সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছে।

পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাাপুর দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৩ নির্বাচনি আসন। পলাশবাড়ীর ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং সাদুল্লাপুরের ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে এ নির্বাচনি আসন। এ আসনে ভোটার রয়েছে ৫ লক্ষ ২১ হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬১ হাজার ১১৩ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৭৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১৮ জন। এ আসন ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩০ বছর জাপার দখলে ছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ছয়বার এ আসনে ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী এমপি ছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. ইউনুস আলী সরকার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়। পরবর্তী সময়ে এ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি। গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চান। তবে তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন আরও বেশ কয়েকজন নেতা।

আরও পড়ুনঃ  সরবরাহ কমায় বেড়েছে দাম

এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান সরকার, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম সরকার লিপন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহারিয়ার খান বিপ্লব, সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল্যাহেল কবির ফারুক। এ ছাড়াও দলের মনোনয়ন চেয়ে প্রচারণায় রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার (অব.) মাহামুদুল হক, আবু বকর প্রধান, এ্যাডভোকেট জরিদুল হক, এ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান ও আজিজার রহমান বিএসসি।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম সাকা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী বড় রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে অংশ নিতে যেমন অনেকেই আগ্রহী থাকে তেমনি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাও থাকে। তবে তা দলে বিভক্তি হিসেবে কাজ করে না। নির্বাচনের সময় কখনো কখনো একাধিক প্রার্থী হলে তার পক্ষ-বিপক্ষে কর্মীরা ভাগ হয়ে পড়ে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি বা গ্রæপিং নেই।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশ নিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষিত না হলেও ভোটের মাঠে নেমে গেছেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সরব উপস্থিতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি। গাইবান্ধা-৩ আসনে বেশ কয়েকজন নেতা প্রচারণা শুরু করায় নতুন মাত্রা পেয়েছে বিএনপির তৃণমূলের রাজনীতি। এর মধ্যে রয়েছেন জেলা কমিটির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা ড. মিজানুর রহমান মাসুম এবং দলের জেলা কমিটির উপদেষ্টা মো. রফিকুল ইসলাম রফিকসহ আরও অনেকে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন নবী টিটুল বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে গাইবান্ধায় বিএনপি অনেক বেশি সংগঠিত। পার্টিতে কোনো বিভেদ-কোন্দল নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই। শিগগিরই দলের করণীয় ও অবস্থান স¤পর্কে জানা যাবে। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত নেই বিএনপির। তবে ওই নির্বাচনে কম সময়ের নোটিশে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সব আসনেই সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী ঠিক করে রাখার প্রক্রিয়া চলছে।

আরও পড়ুনঃ  পোড়াবাড়ির চমচমে মজবুত অর্থনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন ঘর গোছাতে মাঠে নেমেছে আরেক বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। আসন্ন নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে দলের মনোনয়ন পেতে প্রচারণায় নেমেছেন প্রয়াত ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর ছেলে প্রকৌশলী মঈনুর রাব্বি চৌধুরী রুমান, জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন।

জেলা জাপার সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক রেজাউন্নবী রাজু বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি নেই। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলটি এখন ঐক্যবদ্ধ। পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

গাইবান্ধা-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দলটির গাইবান্ধা জেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাওছার মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম লেবুর নাম শোনা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে তিনি পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাছাড়াও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে প্রচারণায় রয়েছেন জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের জেলা কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তফা মনিরুজ্জামান, আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী আবু জাহিদ নিউ ও পলাশবাড়ী বঙ্গবন্ধু সাহিত্যকেন্দ্রের পরিচালক বজলার রহমান রাজা।

সংবাদটি শেয়ার করুন