বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরিবারের দাবী

ফিরোজের মৃত্যুতে রহস্য লুকিয়ে আছে

ফিরোজের মৃত্যুতে রহস্য লুকিয়ে আছে

বিজয় একাত্তর হলের ছয়তলা থেকে পড়ে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী কাজী ফিরোজের গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পুখুরিয়ায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার আসর বাদ পারিবারিক কবরস্থানে তার সম্পন্ন হয়।

গত (১৯ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের ছয়তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফিরোজকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে, অভিযোগ করে নিহতর পরিবারের লোকজন বলেছেন, ফিরোজ ছয়তলা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়নি, তার মৃত্যুর পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে। ফিরোজকে মেরে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পরিবারের লোকজন।

নিহত কা্জী ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচারাল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে ফিরোজের মরদেহ গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারকের ঘটনা ঘটে। ছেলের মরদেহের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিলাপ করতে থাকেন গর্ভধারীনি মা নিপা বেগম। ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক বাবা চুন্নু কাজী। শেষবারেরমতো ফিরোজের মরদেহ দেখতে আসা স্বজন, এলাকাবাসী ও সহপাঠিদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার আকাশ বাতাশ। ফিরোজের অকাল মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়ি বইছে শোকের মাতম।

নিহত ফিরোজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরোজের বাবাকে ফোন করে বলা হয় আপনার ছেলে ফিরোজ আত্মহত্যা করেছে। ফোন পেয়ে ঢাকায় ছুটে যান পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা ৪০ মিনিটের সময় ফিরোজের বন্ধুরা তার কক্ষে গিয়ে দেখতে পায় টেবিলের উপর রাতের খাবার ও একটি প্যাডে কিছু লেখা। ফিরোজের রাতের খাবার বন্ধুরা রুমে এনে রেখেছিলেন। খাবার না খেয়েই হঠাৎ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ফিরোজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিজয় একাত্তর হলের ভবন থেকে ফিরোজের পড়ে যাওয়ার খবর পান বন্ধুরা। তবে, ফিরোজ বিজয় একাত্তর হলে কার কাছে এবং কেন গিয়েছিলেন তা বলতে পারেন না বন্ধুরা।

আরও পড়ুনঃ  ১৮ জন ফেল বিদেশ কেন্দ্রের

ফিরোজের পরিবারের লোকজন আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ফিরোজের। কিছুদিন আগে সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ফিরোজের মা। কিন্তু ফিরোজের বাবা একজন আদর্শ কৃষক বিষয়টি জানতে পেরে সেই মেয়ে ফিরোজের মায়ের সঙ্গে দেখা করেননি। পরে মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে ফিরে আসে ফিরোজ। বাড়ী ফিরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ফিরোজ। চিকিৎসা শেষে গত শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় যায় ফিরোজ। কিন্ত, বেশ কিছু দিন যাবত ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন ফিরোজ। ঢাকায় যাওয়ার আগে মাকে কথা দিয়েছিলেন আত্নহত্যারমতো কোন ঘটনা আমি ঘটাবো না।

কিন্ত, ফিরোজের মৃত্যুর পর জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে তার টেবিলের উপর রাখা প্যাডে কিছু লেখা পাওয়া যায়। প্যাডে লেখা ছিলো, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই। সেহেতু এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমারে মৃত্যুর দায়ভার একান্তই আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ। এই পৃষ্ঠার উপরে ১৯/০৯/২৩ তারিখ এবং নিচে ফিরোজের নাম ও রাত ১১টা ৩ মিনিট সময় উল্লেখ করা ছিলো। বাকি অর্ধেক পৃষ্ঠায়, রাত ১১টা ৫ মিনিট সময় উল্লেখ করে লেখা ছিল, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইলো মায়ের হাতে দিতে। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনো আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক, শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না। এই লেখার নিচে আবারও লেখা ‘ফিরোজ।’ তবে, লেখা দুটি ফিরোজের হাতের লেখা কিনা তা পরিস্কার নয় পরিবারের লোকজন।

আরও পড়ুনঃ  বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা

মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত নিহত কাজী ফিরোজ গ্রামের একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪.৯১ ও গোপালগঞ্জ জেলা শহরের একটি কলেজে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ফিরোজের বাবা চুন্নু কাজী একজন আদর্শ কৃষক বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

বুধবার গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পুখুরিয়ায় ফিরোজের দাফন সম্পন্ন হয়। দাফনে অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ ৬০/৭০ জনের একটি প্রতিনিধিদল ফিরোজের দাফনে অংশ নিতে তার বাড়িতে আসেন।

অভিযোগ করে নিহতর পরিবারের লোকজন বলেছেন, ফিরোজ ছয়তলা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়নি, তার মৃত্যুর পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে। ফিরোজকে মেরে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পরিবারের লোকজন।

সংবাদটি শেয়ার করুন