কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার ভাঙ্গনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তীরবর্তী মানুষেরা। এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আতংকে রাত কাটাচ্ছেন। বেশ কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানী ঢলে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত দলদলিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার, অর্জুন, লালমসজিদ, ভেন্ডার পাড়া, কুমার পাড়া, ফকির পাড়া ও শেখের খামার এলাকার ভাঙন কবলিত মানুষেরা। এসব এলাকায় তিব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধহারে দিনাপাত করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা পাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। উপজেলার গোড়াইপিয়ার, কুমার পাড়া ও ফকির পাড়া এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদী ভাঙনে একর ময় একর আবাদি জমি এবং বসতবাড়ি, বড় বড় গাছ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গোড়াই পিয়ারের এলাকাবাসী জানান, এখনে যে ভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তারাতারি ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যাবস্থা না নিলে এখানকার ৩ থেকে ৪ টি গ্রামের ৫ থেকে ৬’শ পরিবার অসহায় হয়ে যাবে।
হুমকির মুখে পড়া গ্রাম গুলোর মধ্যে মগাপাড়া, ঝাজুয়াপাড়া, ফকিরপাড়া, কানিপাড়া, ভেন্ডারপাড়া, কুমারপাড়া ও পাকারমাথা। এছাড়াও গোড়াই পিয়ার দাখিল মাদরাসা, গোড়াই পিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর হোকডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ওয়ার্ড ক্লিনিক, ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ উক্ত গ্রাম গুলোর কয়েক হাজার পরিবার। তিস্তার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকেরা জানান, আমরা কোন সাহায্য চাইনা নদী সংস্কার চাই। ভাঙ্গন এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করার জোর দাবী করেন।
থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর ফকির পাড়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম (৫০) জানান, আমার বাড়ি এ পর্যন্ত তিনবার তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। আমার স্বামী প্যারালিষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি। আমার বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
একই এলাকার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সীমা আক্তার (১৫) জানান, আমাদের ঘর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। কখন যেন থাকার ঘরটুকুও তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। রাত্রে ঘুম নেই পড়ালেখায় মন নেই আতংকে দিন কাটাচ্ছি। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার তিস্তার পাড়ে আতংকে দিনাপাত করছেন তাদের মধ্যে আব্দুস ছামাদ (৭০), আব্দুল হামিদ (৬৫), আজিরন বেওয়া (৫৫), আয়শা বেগম (৬০) ও আফরুজা বেগম (৪৫) জানান, তিস্তার ভাঙ্গনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাপাত করছি। আমরা সাহায্য চাইনা আমরা চাই নদী সংস্কার। এছাড়া ভাঙ্গন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবী জানাচ্ছি।
থেতরাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, তিস্তার ভাঙ্গনে আমার এলাকার কয়েকটি জাগায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পড়িবার গুলোর তালিকা করা হচ্ছে। পাউবোর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিস্তার পাড়ে
যে সব এলাকায় নদী ভাঙ্গন হচ্ছে সে সব এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চলছে। এছাড়া আপনার মাধ্যমে যে সকল ভাঙ্গন এলাকার বিষয় জানতে পারলাম সে সব এলাকায় সরেজমিনে দেখার জন্য লোক পাঠিয়ে দিব। তারপর ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
আনন্দবাজার/শহক