- এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২,১৪৫ জন কর্মকর্তা এনসিজিজি-তে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন
এশিয়ান সেঞ্চুরি’ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি সুযোগ উপস্থাপন করেছে এনসিজিজি অ্যালামনাইয়ের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাগণের জ্ঞান ও সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করতে উৎসাহিত করা হয়
-এনসিজিজি-র ডিজি
বিদেশ মন্ত্রকের (এমইএ) সঙ্গে অংশীদারত্বে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাগণের জন্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স (এনসিজিজি) আয়োজিত ২-সপ্তাহব্যাপী ৬০তম সক্ষমতা বিনির্মাণ কর্মসূচি (ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম – সিবিপি) ২জুন, ২০২৩-এ সমাপ্ত হয়। ১,৫০০ সরকারি কর্মকর্তার জন্য সিবিপি-র প্রথম পর্যায় শেষে, এনসিজিজি ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ১,৮০০ সরকারি কর্মকর্তার সক্ষমতা বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। কোভিড-১৯ অতিমারি পরবর্তী সময়ে, বিগত দুই বছরে, এনসিজিজি ইতোমধ্যে ৫১৭ জন বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীকে ‘এশিয়ান শতাব্দী’ বলা হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার এবং তাদের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সুযোগ করে দেয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, পারস্পরিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করা এবং ই-গভর্ন্যান্স অবলম্বন করার মাধ্যমে নাগরিক-কেন্দ্রিক জননীতি ও সুশাসনের দিকে মনোনিবেশ করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, ভারতীয় সরকার সক্রিয়ভাবে এই সকল প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে। এটি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকে তাদের সরকারি কর্মকর্তা ও টেকনোক্র্যাটগণের সক্ষমতাকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে। এই মিশনের অন্বেষণে, বিদেশ মন্ত্রক (এমইএ) ন্যাশনাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স (এনসিজিজি)-কে ‘ইনস্টিটিউশন ইন ফোকাস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলস্বরূপ, এনসিজিজি তার কার্যক্রম সমূহকে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধি করছে।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স-এর মহাপরিচালক শ্রী ভরত লাল বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাগণের ৬০তম সিবিপি-র সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন, কীভাবে এই সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ কর্মসূচিগুলো জ্ঞানের আদান-প্রদানকে সহজতর করার প্রাথমিক উদ্দেশ্যের সাথে যত্ন সহকারে তৈরি করা হয় এবং কীভাবে এই উদ্ভাবনী অনুশীলনসমূহ ভারতে প্রশাসন ও জনসেবা প্রদানকে উন্নত করতে সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়। ভারতের লক্ষ্য সর্বোত্তম অনুশীলনের আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণে অবদান রাখা। ডিজি মহোদয় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাগণকে সিবিপি-র ৪-৫টি মূল শিক্ষণীয় বিষয় শনাক্ত করার জন্য অনুরোধ করেন, যেগুলো তাঁরা তাঁদের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে উপযোগী করে নিতে ও পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন।
ডিজি মহোদয় সমাজে সরকারি কর্মকর্তাগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তাগণকে জনগণের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল হওয়ার এবং সময়ানুবর্তী সরকারি সেবাপ্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। জন-কেন্দ্রিক পন্থা অবলম্বন করে ও কার্যকরভাবে সমস্যা সমাধানের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, সরকারি কর্মকর্তাগণ জনগণের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন এবং শাসনব্যবস্থায় আস্থা বৃদ্ধি করতে পারেন। তিনি তাঁদেরকে আবাসন, পানি, শৌচালয়, রান্নার গ্যাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক পরিষেবাসমূহ ও দক্ষতা উন্নয়নের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে ও মানসম্মতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এশীয় শতাব্দী’ একটি রূপান্তরমূলক পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে প্রধান বৈশ্বিক ক্রীড়নক হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি এবং তরুণ ও গতিশীল জনগোষ্ঠীসহ দক্ষিণ এশিয়া টেকসই উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর অধিকারী। ডিজি মহোদয় সর্বজনীন প্রতিবন্ধকতাসমূহ মোকাবিলা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নসাধন এবং এই অঞ্চলের নাগরিকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য এই শক্তিসমূহ কাজে লাগানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
গ্লোবাল সাউথের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে, নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। উচ্চ-মানের সরকারি সেবাসমূহ নিশ্চিত করে এবং একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে, নারীরা সক্রিয়ভাবে জনশক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারে, যার ফলে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ডিজি মহোদয় সরকারি কর্মকর্তাগণকে সুবিধা ও সম্পদে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই সমন্বিত প্রচেষ্টা আমাদের দেশগুলোকে উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়ক।
উপরন্তু, তিনি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জোরালো ব্যবস্থাগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অধিকন্তু, তিনি শক্তিশালী ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন, এবং এই সম্পর্কে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টাকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। ডিজি মহোদয় কর্মকর্তাগণকে এনসিজিজি অ্যালামনাইয়ের অংশ হিসেবে সক্রিয়ভাবে তাঁদের সর্বোত্তম অনুশীলনসমূহ ও জ্ঞান বিনিময় করার আহ্বানও জানান। অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের এই আদান-প্রদান উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে পারে, নতুন পন্থা প্রণয়নকে অনুপ্রাণিত করতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থা ও জনপ্রশাসনে ইতিবাচক পরিবর্তনকে উন্নীত করতে পারে।
কোর্স কোঅর্ডিনেটর ড. এ. পি. সিং তাঁর বক্তব্যে এই ৬০তম সক্ষমতাবৃদ্ধি কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের বৈচিত্র্য তুলে ধরেন। এই উদ্যোগসমূহের মধ্যে শাসনের বিভিন্ন দিক, ডিজিটাল রূপান্তর, উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা ও টেকসই অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে শাসনের পরিবর্তিত দৃষ্টান্ত, পাসপোর্ট সেবা ও MADAD-সহ ডিজিটাল প্রশাসনের কেসস্টাডিসমূহ, সকলের জন্য আবাসন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সেরা অনুশীলনসমূহ, পরিবেশবান্ধব স্মার্ট শহর পরিকল্পনা, ভারতের সংমিশ্রিত সংস্কৃতি, সুশাসনে আধার-এর ভূমিকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সর্বভারতীয় পরিষেবাসমূহের সাধারণ ধারণা, স্ট্যাচু অব ইউনিটি প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, স্বামীত্ব প্রকল্প, স্বাস্থ্যখাতের অপ্টিমাইজেশান, নেতৃত্ব ও যোগাযোগ, ই-গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, UMANG, প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি যোজনা, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস (জিইএম), গ্রামীণ সংযোগের জন্য পিএমজিএসওয়াই, সবুজ শক্তি, কার্যকরী জনসেবাপ্রদান, সতর্কতা-সংক্রান্ত প্রশাসন, নারী-কেন্দ্রিক শাসন, দুর্নীতিবিরোধী কৌশল, সার্কুলার অর্থনীতি এবং নির্বাচন পরিচালনা ইত্যাদি। তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন যে, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের এক্সপোজার ভিজিটে যোগ দেওয়ার মূল্যবান সুযোগ ছিল, যা তাঁদের সামগ্রিক শিক্ষার যাত্রাকে বর্ধিত করেছে। পরিকল্পিত পরিদর্শনসমূহের মধ্যে ছিল সাহারানপুরের জেলা প্রশাসন, ভারতের সংসদ এবং প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়।
এমইএ-র সাথে অংশীদারত্বে, এনসিজিজি বাংলাদেশ, কেনিয়া, তানজানিয়া, তিউনিসিয়া, সিচেলিস, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, লাওস, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া – এই ১৫টি দেশের সরকারি কর্মকর্তাগণকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে উপলব্ধি করে, এনসিজিজি রাষ্ট্রসমূহের একটি সম্প্রসারণশীল তালিকা থেকে অধিক সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে সুযোগ প্রদানের জন্য সক্রিয়ভাবে তার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এই সম্প্রসারণের লক্ষ্য হলো ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো এবং এনসিজিজি প্রদত্ত দক্ষতা ও সংস্থানসমূহ থেকে যেন আরও বেশি দেশ উপকৃত হতে পারে তা নিশ্চিত করা।
এই পুরো সক্ষমতাবৃদ্ধি কর্মসূচির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশের কোর্স কোঅর্ডিনেটর ড. এ. পি. সিং, কো-কোর্স কোঅর্ডিনেটর ড. সঞ্জীব শর্মা এবং এনসিজিজি-র ক্যাপাসিটি বিল্ডিং টিম।
আনন্দবাজার/শহক