রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনের ইতিহাসে মেট্রোরেল নতুন মাত্রা যোগ করলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন আজ (২৮ ডিসেম্বর)।
আগামীকাল (২৯ ডিসেম্বর) থেকে সাধারণ যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন। মেট্রোরেল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকার ‘মেট্রোরেল আইন-২০১৫’ অনুমোদন করেছে। এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে ১০ বছর জেল ও ১০ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনের ৩০ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনও ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা বা মেট্রোরেল সেবা প্রদান করলে বা কোনও যন্ত্রপাতি স্থাপন বা প্রতিস্থাপন করলে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর: ৩১. কোনও ব্যক্তি যদি সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করেন, এর জন্য তিনি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
প্রবেশাধিকারে বাধা প্রদান: ৩২. কোনও ব্যক্তি যদি মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্রতিনিধি বা কর্মচারীকে মেট্রোরেল এলাকার পার্শ্ববর্তী ভূমি ও স্থাপনায় স্থাপনার যন্ত্রপাতি প্রবেশে বেআইনিভাবে বাধা দেয়য়, এজন্য তিনি অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্য কোনও কর্মকাণ্ড সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা: ৩৩. কোনও ব্যক্তি যদি আইনানুগ কারণ ছাড়া মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্য কোনও কর্মকাণ্ড সম্পাদনে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা প্রদান করেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, তাহলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের সংরক্ষিত স্থানে অনুপ্রবেশ: কোনও ব্যক্তি যদি অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের সংরক্ষিত স্থানে অনুপ্রবেশ করেন বা ওই স্থানে প্রবেশের পর মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তার অধীনস্থ ব্যক্তির অনুরোধের পরও সেখানে অবস্থান করেন, এর জন্য তিনি অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
মেট্রোরেল ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা: ৩৫. কোনও ব্যক্তির দ্বারা যদি মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন কাজ করেন, এর জন্য তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের টিকেট বা পাস বিক্রি বা জাল: ৩৬. কোনও ব্যক্তি যদি অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের টিকিট বা পাস বিক্রি করেন, অথবা টিকিট বা পাস বিকৃত বা জাল করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
কর্মচারীদের হাতে মেট্রোরেল বা এর যন্ত্রপাতির অপব্যবহার: ৩৭. কোনও কর্মচারী যদি মেট্রোরেল ও এর যন্ত্রপাতি এমনভাবে ব্যবহার করেন যাতে কোনও যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং দায়িত্ব পালনকালে এমন কোনও কাজ করেন যার ক্ষমতা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে দেননি, তাহলে তার এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান বা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান: ৩৮. কোনও ব্যক্তি যদি পরিদর্শককে, তার দায়িত্ব পালনে বাধা দেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন অথবা মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন, তাহলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হবেন।
বিমা না করা: ৩৯. কোনও লাইসেন্সধারী যদি মেট্রোরেল ও এর যাত্রীর এবং তৃতীয় পক্ষের বিমা না করেন তাহলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
টিকিট বা বৈধ পাস ছাড়া ভ্রমণ: ৪০. কোনও ব্যক্তি যদি টিকিট বা বৈধ পাস ছাড়া বা অনুমোদিত দূরত্বের বেশি মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন বা ভাড়া এড়ানের উদ্দেশ্যে অন্য কোনও কৌশল অবলম্বন করেন, তাহলে যাতায়াতের ভাড়ার ১০ গুণ পর্যন্ত জরিমানা বা অর্থ অনাদায়ে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
কারিগরি মান অনুসরণ না করা: ৪১. কোনও লাইসেন্সধারী যদি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত কারিগরি মান সম্পর্কে নির্দেশনা অনুসরণ ছাড়া মেট্রোরেল নির্মাণ রোলিং স্টক স্থাপন, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সম্পাদন করেন, তাহলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ড হবে।
লাইসেন্সধারীর অপরাধ: ৪২. কোনও লাইসেন্সধারীর মাধ্যমে এই আইনের অধীন কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে এই অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে গণ্য হবে। এজন্য এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে দণ্ড হবে, যদি তিনি প্রমাণ করতে না পারেন যে ওই অপরাধ তার অজ্ঞাতসারে হয়েছে বা ওই অপরাধ রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
অপরাধ সংঘটনে সহায়তা, প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র: ৪৩. কোনও ব্যক্তি যদি এই আইনের অধীন কোনও অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেন বা যড়যন্ত্র করেন এবং ওই বড় প্ররোচনার ফলে সংশ্লিষ্ট অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে সহায়তাকারী বা প্ররোচনাদানকারীর নির্ধারিত দণ্ড হবে।
অপরাধ পুনঃসংঘটনের দণ্ড: ৪৪. কোনও ব্যক্তি যদি এই আইনে উল্লেখিত কোনও অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে দণ্ড ভোগ করার পর আবার একই অপরাধ করেন, তাহলে তিনি ওই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দণ্ড রয়েছে তার দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ: ৪৫. ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনও কর্মকর্তা বা পরিদর্শকের লিখিত প্রতিবেদন ছাড়া কোনও আদালত এই আইন বা বিধির অধীন কোনও মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করবেন না।
ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ: ৪৬. এই আইনের বিধানাবলীর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, এই আইন বা বিধির অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি প্ৰযোজ্য হবে।
মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার: ৪৭. এ আইনের অন্যান্য ধারায় ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের ধারা ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৭, ৩৮ ও ৪০ এর অধীন অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নম্বর আইন) এর তফসিলভুক্ত করে বিচার করা যাবে।
ক্ষমতা অর্পণ: ৪৮. সরকার, এই আইনের অধীন যে কোনও ক্ষমতা বা দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট শর্তে, নিবাহী পরিচালক বা কর্তৃপক্ষের যে কোনও কর্মকর্তাকে অর্পন করতে পারবে।
ক্ষতিপূরণ: ২১. মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণে মেট্রোরেল ও যাত্রী ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি বা স্থাপনা ও সম্পদের ক্ষতি হলে এবং সম্পদের মালিক কর্তৃক ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপিত হলে, লাইসেন্সধারী ওই ব্যক্তির স্থাপনা বা সম্পদের জন্য মালিককে দাবি উত্থাপনের ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আনার ব্যবস্থা করবেন।
আনন্দবাজার/কআ