ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিল-ঝিলের সৌন্দর্য কচুরিফুল

বিল-ঝিলের সৌন্দর্য কচুরিফুল

ফরিদপুরের বিভিন্ন বিল-ঝিল ও নদী-নালায় ফুটেছে কচুরিফুল। ফুলের নির্মল ও স্নিগ্ধকর সৌন্দর্য প্রকৃতিতে যোগ করেছে নান্দনিকতা। তাই প্রকৃতি মেতেছে এখন নতুন রূপে। চোখ জুড়ানো অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ।

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় মন। যেন প্রকৃতি সেজেছে এক অপরূপ সৌন্দর্যে। পানির উপর বিছানো সারি সারি সবুজ পাতা আর ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। দূর থেকে মনে হয় কেউ যেন সবুজ চাঁদরে ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে।

সৌন্দর্যের পাপড়ি মেলে ধরা কচুরিফুলের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই তুলছেন ছবি। ছবির ক্যানভাসে একই ফ্রেমে আবদ্ধ হচ্ছেন তরুণ-তরুণিরা। খাল বিল ও জলাশয়ে ফুল ফুটে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা খাল-বিল কিংবা নদী-নালা থেকে শিশির ভেজা কচুরিপানার ফুল তুলে খেলা করছে। গ্রামের মেয়েরা কেউবা খোঁপায় বাঁধছে এ ফুল।

চোখ জুড়ানো সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপি রংয়ের কচুরিপানা ফুলের উঁকি হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। ফোটা ফুলের সঙ্গে কুঁড়িগুলো মাথা তুলেছে নতুন করে ফোটার আশায়। সবুজ পাতা আর হালকা গোলাপী ফুলের মিলন মেলায় মনের আনন্দে নির্ভয়ে বিচরণ করছে পানকৌড়ি আর ডাহুক। ফুটন্ত ফুলের মাথায় খেলা করছে প্রজাপতি আর ভ্রমরের দল।

ফরিদপুরের চাঁপাইবিলে কচুরি ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা তানিয়া সুলতানা বলেন, কচুরিপানার ফুলের যে এমন সৌন্দর্য থাকে তা চোখে না দেখলে হয় তো জানাই হতো না। বাড়ির পাশে এমন অপরূপ শোভা চিত্তবিনোদনে খুলে দেয় আনন্দের দুয়ার। রানা বাবু বলেন, বিকেল হলেই আমরা বেরিয়ে পড়ি সৌন্দর্যের খোঁজে। বিলের মধ্যে ফুটে থাকা এমন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়।

ফরিদপুরের সালথার একটি বিলে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা মো. মনিরুজ্জামান মোল্যা বলেন, প্রতি বছর আমাদের এ বিলে বর্ষার পানিতে বিলের চারপাশ কচুরিপানায় ভরে যায়। অনেকে এ কচুরিপানা কেটে গো-খাদ্য হিসাবে গরুকে খাওয়ায়। এখন বিলের পানি কমতে শুরু করেছে। কচুরিফুলও ফুটতে শুরু করেছে। আমরা এখন এ কচুরিপানা পরিষ্কার করে, জমিগুলো সরিষা চাষের জন্য প্রস্তত করবো।

জানা যায়, কচুরিপানা এক প্রকার ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশের সকলের কাছে সুপরিচিত। বর্ষাকালে অত্যধিক পরিমাণে জম্মায় ও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে নদী -নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর,পুকুর-জলাশয় ভরে তুলে। এটি অবাধ ভাসমান গুল্ম ও নিচে থেকে একথোকা লম্বা গুচ্ছমূল, ওপরে খর্বিত কান্ডে একথোকা পাতা।

পাতার বোঁটা   খাটো পেটমোটা ও স্পঞ্জি। পাতা বেষ্ঠিত মঞ্জুরি ১৫-২০ সে.মি লম্বা ও দন্ডে থাকে ১০-১২ সে.মি লম্বা দৃষ্টিনন্দন ফুল। বাংলাদেশে কচুরিপানা একটি আগাছা। জম্মায় বদ্ধোজলাশয়ে ,খাল-বিল, ডোবা -নালাসহ সবত্র। বর্ষাকালে এ পানা দ্রুতই বংশবৃদ্ধি করে এবং প্লাবনভৃমিতে ব্যাপকভাবে ছড়ায়।

ফরিদপুরের একাধিক লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর মনে হলেও কৃষিক্ষেত্রে এর যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কচুরিপানা থেকে এখন জৈব সারও তৈরি হয়। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, কৃষকদের কচুরিপানা থেকে জৈবসার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দিলে জৈবসার ব্যবহারে যেমন কৃষক উপকৃত হবে অপরদিকে বিদেশের রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন