ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগের অভিযোগ

অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার পদে অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ ছাড়াই প্রাথমিকভাবে প্রার্থী নির্বাচন করেছে সিলেকশন বোর্ড। যা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে বলে জানা যায়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের শূন্য চিফ মেডিকেল অফিসার পদ পূরণের জন্য বাংলাদেশি স্থায়ী নাগরিকদের নিকট হতে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে প্রার্থীকে এম.বি.বি এস এবং যে কোনো অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় হতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারী চাওয়া হয়।

এছাড়াও শিক্ষাজীবনের সকল পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ অথবা প্রথম শ্রেণীর কথা বলা হয়। অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রার্থীকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১৫ (পনেরো) বৎসরের পেশাগত দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।

গত ৪ ডিসেম্বর এ পদের জন্য অনুষ্ঠিত হওয়া মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে সিলেকশন বোর্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডার ১৯৭৩ প্রথম স্ট্যাটিউটসের ২৮ ধারা অনুযায়ী চিফ মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগের জন্য এ বোর্ড গঠিত হয়। সিলেকশন বোর্ডের তরফ থেকে জানা যায়, চিফ মেডিকেল অফিসার পদের জন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামানকে নিয়োগের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা আগামী ২২ ডিসেম্বর অথবা ২৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত করা হবে।

তবে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বাকি প্রার্থীদের অভিযোগ ডা. হাফেজা বেগম এ পদের জন্য অযোগ্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রার্থী জানায়, বিজ্ঞপ্তির শর্ত হল এম.বি.বি এস পাশের পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারী হতে হবে। কিন্তু তিনি (হাফেজা বেগম) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করেছেন, তা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন-২০১০ এর অনুমোদিত নয়। তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স (পাবলিক হেলথ্) ডিগ্রি করেন যা অনুমোদিত নয়।

আরও জানা যায়, প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক ছিলেন। সম্পর্কে তিনি (এমাজউদ্দীন) ডা. হাফেজা জামানের আপন বেয়াই। এ কারণে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও হাফেজা এগিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ বাকি প্রার্থীদের। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি এস অধ্যয়নকালীন থেকে অদ্যাবাধি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পন্থী হিসেবে পরিচিত। ওনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলে বিএনপি পন্থী হিসেবে জানেন বলে অভিযোগ প্রার্থীদের।

এ বিষয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সিলেকশন বোর্ডের সদস্য ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমি তো আর সবকিছু বলতে পারবো না। আপনি উপাচার্যের অফিসে যোগাযোগ করেন। আরেক সিলেকশন বোর্ডের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষের ডিন ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেটা করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান অনুযায়ী করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বললে ভালো হয়। পরে তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিজ্ঞপ্তি আছে সেখানে ওরকম কিছু বলা নাই যে, অমুক যায়গা থেকে স্নাতকোত্তর করতে হবে। এখানে যারা আবেদন করেছিল তাদের কারো এপ্রুভাল ছিল না, সবাই একই ক্যাটাগরির। কারো-ই বিএমডিসির এপ্রুভাল নেই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। যিনি সিলেকশন বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএমডিসির কোনো শব্দ লেখা ছিল না। যেমন আমরা মেডিকেল কলেজেগুলোতে যখন নিয়োগ দেই; আমরা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে দেই যে বিএমডিসি স্বীকৃত ডিগ্রিপ্রাপ্ত হতে হবে। তবে আমি এ অভিযোগের সাথে একমত। ইদানিং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরকম বিভিন্ন ডিগ্রি দিচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে নয় বরং আমি একজন মেডিকেল প্রফেশনের মানুষ হিসেবে এর ঘোরতর আপত্তি জানাই।

অভিযোগের সাথে একমত জানিয়ে তিনি বলেন, বোর্ডে আমি আমার বক্তব্য পেশ করছি। জানিনা পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী। যাই-ই দিক না কেন বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত হতে পারে, কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিগুলো যদি স্বীকৃত হয় তাহলে বিএমডিসি কি ভূমিকা পালন করবে? বলে তিনি প্রশ্ন করেন। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি যে, মেডিকেল বোর্ডের প্রোমোশনে আসলে এ ডিগ্রি টা বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত হওয়া উচিত। এটা আমার বক্তব্য, যেটা আমিও চাই। কিন্তু এখানে আমার বক্তব্য তো সবকিছু না। আমার কাছে বিজ্ঞাপ্তির ভেতরেই একটা ট্যেকনিকালি ফল্ট (ভুল) রয়েছে বলে মনে হয়েছে।

জানতে চাইলে বর্তমান শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. হাফেজা জামান বলেন, আমার এগুলো কিছু জানা নাই। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো বুঝবে। আমি পরীক্ষা দিয়েছি, এরপর বাকি কোনো কিছুই আমি জানি না। আমি খুব চাপে আমি, প্লিজ আমাকে এখন ডিস্টার্ব কইরেন না। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন জানতে চাইলে ডা. হাফেজা জামান বলেন, আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স (পাবলিক হেলথ্) করেছি।

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হয় নি সিলেকশন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি শুধু বলেন, কোথায় কী নিয়ম আছে জানি না। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী হবে এটুকুই বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন