শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ততা

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ততা

শীত মৌসুমে বাজারের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণে ফরিদপুরে মুড়িকাটা আবাদে ব্যস্ত সময় পাড় করছে চাষীরা। এ মৌসুমে ৪ হাজার ৫’শ ৫৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে এ পেঁয়াজ । বন্যার পানি ক্ষেত থেকে নেমে যাওয়ার পর পরেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন তারা।

সরেজমিনে ফরিদপুরের সদর উপজেলার অম্বিকাপুর, চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায় চাষীরা কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করছে, যারা আগর (আগে ভাগে) আবাদ করেছিলো তারা চারা গাছকে যত্ন নিচ্ছেন। কেউ বা চারা গাছে কিটনার্শক দেওয়ার কাজ সেরে নিচ্ছেন ।

অম্বিকাপুর মাঠে একনি একজন চাষী মো. রাজর হোসেন। তিনি জানালেন, আগর মুড়িকাটা পেঁয়াজের (লাইট) ছোট পেঁয়াজ রোপণ করে ছিলাম, ভাল হয়েছে তবে ঘাস হয়েছে অনেক। এখন পৈরেতের (শ্রমিকের) দর অনেক বেশি। এবছর সব কিছুর দর বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষেত খামারি করতে ব্যয়ও হচ্ছে বেশি।

এ মাঠের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কাজ করছেন কৃষক ফরহাদ শেখ। তিনি বলেন, গত বছর এক বিঘায় যে কিটনাশক দেওয়া হয়েছিল, এবার সেই পরিমাণ দিতে গেলে প্রায় দ্বিগুন খরচ বেড়েছে। এখন আমাদের এ পেঁয়াজ বাজারের ভাল দর না পেলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ত হবে।

চরমাধবদিয়ার আবজালমন্ডলের ডাঙ্গীর এলাকার চাষী তুহিন মন্ডল জানান, একর প্রতি এই পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা । কিন্তু, এবারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। বাজারের বিদেশী পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক থাকলে প্রতি একরে যে পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারবো সেটা বিক্রয় করতে পারবো লক্ষাধিক টাকা।

আরও পড়ুনঃ  নীলফামারীতে আগাম আমন ধানের নমুনা শস্য কর্তন

এদিকে, জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আশুতোষ মালো জানায়, বাজারের সার, কীটনাশক, লাইট পেঁয়াজ (বীজ) এর দর বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। তাই আমাদের দাবি সরকার বিদেশী পেঁয়াজ কম আমদানি করলে চাষীদের পুজি উঠবে ঠিকঠাক মতো।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ তুলনামূল একটু বেশি হলেও অল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। বছরের এ সময়ে (শীত মৌসুমে) সারা দেশেই পেঁয়াজের ঘাটতি থাকায় মুড়িকাটার চাহিদা থাকে বেশ, এসময় ভাল দরও পায় চাষীরা। আর এ জন্যই চাষিরা বর্ষা মৌসের পর পরই চাষাবাদ শুরু করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের।

তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে পেঁয়াজের উৎপাদন ভাল হবে, তবে বিদেশী পেঁয়াজের আমদানি কম করতে হবে, তবেই আমরা লাভবান হবো।’

এদিকে, ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিয়াউল হক বলেন, চলতি মৌসুমে চাষীরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে, এ পেঁয়াজ বাজারের চাহিদা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৪ হাজার ৫’শ ৫৮ হেক্টর জমিতে এ পেঁয়াজের আবাদ হবে আশা করা যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, এ পেঁয়াজ হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ উৎপাদন হয়। আর শীত মৌসুমে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি থাকে। চাষিদের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারের এলেই কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে।

সংবাদটি শেয়ার করুন