শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে দেশি মাছের সংকট

হাওরে দেশি মাছের সংকট

হাওরের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণ, হাওর নষ্ট হওয়া, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, জলাশয় সেচে মাছ ধরা এবং ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দেশিয় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছ

মাছ শিকার বন্ধ রাখলে আবারও দেশি মাছের সুদিন ফিরবে:  নজরুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের হাওর-বিল-নদী থেকে সংগৃহিত দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হতো বিদেশে। এ জন্য বেসরকারিভাবে একটি ফিস ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেছিল। গেল এক দশকে জেলায় সার্বিক মাছের উৎপাদন বাড়লেও দেশিয় মাছের উৎপাদন কমেছে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিকটন।

জানা যায়, এক দশক আগেও হবিগঞ্জের জেলেদের জালে প্রচুর দেশিয় মাছ ধরা পড়ত। বোয়াল, চিংড়ি, রুই, কাতলা, শিং, মাগুর, কৈ, ট্যাংড়া, পুটি, বইচা, শোল, বাইমসহ নানা প্রজাতির দেশিয় মাছের ভান্ডার ছিল এখানকার হাওর-বিল-নদী। এখান থেকে সংগৃহিত মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চলে যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ‘আজমিরীগঞ্জ ফিস ইন্ডাস্ট্রি’র মাধ্যমে ইউরোপ আমেরিকাতেও রপ্তানি হতো সুস্বাদু মিঠা পানির মাছ। তবে এখন আর আগের মতো এসব মাছ পাওয়া যায় না। এছাড়া পাবদা, ঘাঘট, চাপিলা, ট্যাংড়া, চিতল, কালবাউশ, খালিশা, গুতুমসহ বেশ কিছু প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

মৎস্যখাতে জড়িতরা বলছেন, ‘হাওরের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে হাওর নষ্ট হওয়া, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, জলাশয় সেচে মাছ ধরা এবং ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দেশি মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে ।

আরও পড়ুনঃ  আজ থেকে খুলেছে বসুন্ধরা শপিং মল

মাছ চাষের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ‘হাওরের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে হাওর নষ্ট হওয়া, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, জলাশয় সেচে মাছ ধরা এবং ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দেশিয় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছ।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মাছের চাহিদা ৪৫ হাজার ৯২ দশমিক ১২ মেট্রিকটন। সার্বিক উৎপাদন হচ্ছে ৪৯ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪৬ মেট্রিকটন। জেলায় প্রাকৃতিক জলাশয়ের পরিমাণ ৮১ হাজার ৬৭১ হেক্টর। এক দশক আগে (২০১২ সালে) জেলায় দেশীয় মাছের উৎপাদন ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৩ মেট্রিকটন। যা বর্তমানে এসে দাড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ মেট্রিকটনে। অর্থাৎ গেল এক দশকে প্রাকৃতি জলাশয়ে মাছের উৎপাদন কমেছে ৭ হাজার ৫২৬ মেট্রিকটন।

তবে জেলায় বেড়েছে চাষ করা মাছের পরিমাণ। ২০১২ সালে ২৪ হাজার ২৬৪টি পুকুরের ৪ হাজার ১৯১ হেক্টর এলাকায় মাছ চাষ হতো ১৬ হাজার ১৪৫ মেট্রিকটন। বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৩১টিতে। যার ৫৮ হাজার ৯০ হেক্টর এলাকায় মাছের উৎপাদন হচ্ছে ২১ হাজার ৮৫৩ মেট্রিকটন। অর্থাৎ এক দশকে চাষ করা মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫ হাজার ৭০৮ মেট্রিকটন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাওরে মাছের পরিমাণ বাড়াতে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত পোনামাছ অবমুক্ত করছে মৎস্য অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেড়জাল বন্ধে চালানো হয় অভিযান। তবে উপকূলের ন্যায় মাছের প্রজনন মৌসুমে হাওরের জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ রাখার পরিকল্পনা চলছে। যদি এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়, তাহলে দেশিয় মাছের সুদিন আবারও ফিরে আসবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন