ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়তে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়তে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে
  • বুস্টার ডোজে অনাগ্রহী শ্রমিকরা

অতি সময় ব্যয় করে করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজ টিকা দিতে আগ্রহী নয় তৈরি পোশাকখাতের শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে মাত্র ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক প্রথম ডোজ ও ২০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ‘সাম্প্রতিক আরএমজি প্রবৃদ্ধি: উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি ও ক্রিস্টান এইড যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মো. গোলাম মোয়াজ্জেম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বর্তমানে গ্রোথ টিকে থাকবে না নিচে নেমে যাবে এটি নিয়ে প্রশ্ন সামনে এসেছে। কেননা কোভিডে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ক্রেতাদের পোশাক না কেনার কারণে গ্রোথ নিচে নেমে গিয়েছিল। জাতিসংঘের আইনটি মানতে হবে। মালিক-শ্রমিক বাইসাইকের চাঁকার মতো। ট্রেড ইউনিয়ন হওয়া উচিত। তাদের নেতাদের শিক্ষিত হতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে কারখানাও যেন টিকে থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। গত অর্থবছরে ৬২ বিলিয়ন টার্গেটের মধ্যে ৪২ বিলিয়ন রপ্তানি করা হয়েছে। বিদেশে ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ প্রবাসে কাজ করছে। এক সাথে কাজ করতে হবে। কাউকে দোষারোপ নয়। জাতিসংঘের ন্যূনতম যে দিকনির্দেশনা আছে তা পূরণ করতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। ফ্যাক্টরিগুলোকে কর্মবান্ধব করে তুলতে ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় তৈরী পোশাকের বিক্রয় মূল্য বাড়ছে না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য কমছে। সে বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার ফ্যাক্টরির মালিক এবং শ্রমিকদের ভাল চায় এবং প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পের প্রতি কর্মীদের আস্থারও উন্নতি হয়েছে। উভয় পক্ষ মিলে এ সেক্টরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের কাছে তুলে ধরলে, এগুলো সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিডের পর অনেক নারীশ্রমিক ফিরে না আসায় নতুন কর্মী নেয়া হয়েছে। এতে নারীর তুলনায় পুরুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কারখানায় ১২.৫০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটি পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ৬২ শতাংশ শ্রমিকরা জানিয়েছেন তাদের কর্মঘণ্টা বেড়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে কোভিডের টিকার ৭৪ শতাংশ প্রথম ও ২০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। তবে বুস্টার নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সাব-কন্ট্রাক্টের কারখানা বাড়ছে। এতে তাদেরকে জবাবদিহিতা মধ্যে আনতে সমস্যা হবে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কাদেরকে জবাবদিহিতায় আনা হবে?

বাংলাদেশ নিটওয়ার মেনুফেক্টাচারার্স এন্ড ইক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন-বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জে নিট কারখানায় গ্রেডের বাইরে অনেক শ্রমিক রয়েছে। তাদের আয় বেশি ফলে তাদেরকে গ্রেডের মধ্যে নিয়ে আসা যায় না। শ্রমিকরা নিজেরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে চায় না। বাহির থেকে সংগঠিত করতে হয়।

ডে-কেয়ার সেন্টার সম্পর্কে মো. হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটি উন্নতমানের ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে। সেখানে বাচ্চা বেশি আনা হয় না। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা নিজেদের নানী-দাদীর কাছে থাকতে বেশি নিরাপদ মনে করে থাকে। মো. হাতেম বলেন, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২.৫০. ডলারের সুতা ৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ৩/৪ মাসের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এখন নতুন অর্ডারও আসছে না। সুতার দাম নামলে হয়তো অর্ডার পাওয়া যাবে।

শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, কোভিডে ৬০-৬৫ শতাংশ বেতন দিয়ে কাজ করায়। পরে অর্ডার বেশি আসলেও বেতন বাড়েনি। ইউনিয়ন করতে দুষ্টুশ্রমিক বলে নির্ধারণ করা হয়। এটি হয় দুষ্টুমালিকের কারণে। শ্রমিকদের চাকরিটি সম্মানের স্থানের না হলে এ শিল্পে উন্নয়ন সম্ভবনয়।

এক শ্রমিকনেতা জানান, গার্মেন্টে শ্রমিকনেতাদের বের করে দেয়া হয়। তাদের চাকরিচ্যুৎ করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দিয়েও কিভাবে মালিকরা ব্যবসা করছে? সন্তান সম্ভবা হলে নারীদের চাকরি চলে যায়।

গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, সংসার চালাতে শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। এজন্য অনেক সময় তাদের মৃত্যু হচ্ছে। সরকার নিয়ন্ত্রণের হাত নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। এতে শ্রমিকরা দল পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর শ্রমিকদের রেশন দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করুন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম বিভাগের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, লেবার কোর্ট আরও ৪টি বাড়ছে। ডাইফে আমাদের জনবল আছে ৪০২ জন অথচ প্রয়োজন ৯০০ জনের। ৯ হাজার ৯৯৭ জন শ্রমিকের মধ্যে ৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার, মালিক ও শ্রমিক তথা ত্রিপক্ষীয় কাজ করতে হবে।

সিপিডি ঢাকার সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ৫১টি কারখানার ১২৪৪ জন শ্রমিকের মধ্যে এই সার্ভে করে। তাতে নারীর সংখ্যা ৭৫১ অর্থাৎ ৬০.৪ শতাংশ ও পুরুষ ৪৯৩ অর্থাৎ ৩৯.৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালীন সময়ে তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে। ২৫ শতাংশ কারখানার সার্টিফিকেট নেই। প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুষ হিসাবে দিতে হয়েছে, যা অবৈধ।

দেশে এক হাজার ১৩৪টি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে। আসলে কি ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের কোনো উপকার হচ্ছে এটা নিয়ে গবেষণা করা দরকার? ট্রেড ইউনিয়নের কাজ শুধু আন্দোলন নয়, শ্রমিক মালিকের মধ্যে সমন্বয় করা। কিন্তু আমাদের এখানে তা হয় না। কারখানার শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে ট্রেড ইউনিয়ন করেন না। বাইরের লোকজন এটা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মালিক পক্ষ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন