বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খরচের দুশ্চিন্তায় আমনচাষিরা

খরচের দুশ্চিন্তায় আমনচাষিরা

কুড়িগ্রামে আমন মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছে সার সংকট। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে ব্যবসায়ী ও দোকানগুলোতে দ্বিগুণ দামেও মিলছে না এমওপি (পটাশ) সার। এছাড়াও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য সার ও কীটনাশকের দাম। ফলে আমন আবাদে বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উফশী ৯৪ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৫ টন।

আমন চাষাবাদে এবার ইউরিয়া সারের চাহিদা ৯২ হাজার ৩০৬ টন। টিএসপি ২২ হাজার ৮৭১ টন, ডিএপি ৪৩ হাজার ৪৩৩ টন, এমওপি ৫২ হাজার ১৯৫ টন, জিপসাম ৩৬ হাজার ৪৭২ টন।

তম্মধ্যে জেলায় ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ২টন, টিএসপি ১০হাজার ৪৪৬টন, ডিএপি ১৫ হাজার ৪৫৭ টন, এমওপি ২৩ হাজার ৮৮৭ টন এবং জিপসাম ১৪ হাজার ৬৫৬ টন। সবমিলে বরাদ্দ চাহিদার অর্ধেক। এই সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দামের দেড় থেকে দুই গুণ বেশী মূল্যে কৃষকের কাছে সার বিক্রি করছেন ডিলার ও ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ করে এমওপি সার বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে। খুচরা বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি সারের সরকার নির্ধারিত দাম ৭শ টাকা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা দরে। অনেক সময় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিএপিতে বস্তাপ্রতি দাম বাড়িয়েছে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। শুধুমাত্র ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সব ধরনের সারে মূল্য বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুনঃ  সারাদেশে যাচ্ছে আখাউড়ার সবজি

জেলা সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের কালে গ্রামের কৃষক অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হাবীব মেনাজ বলেন, আমি এবার সাড়ে চার একর জমিতে আমনের আবাদ করছি। সার সংকট ও চড়া দামের কারণে শঙ্কায় আছি। বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরেও চাহিদা মত এমওপি সার পাই নাই। যেটুকু পেয়েছি তাও কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ৭৫০ টাকার বস্তা ১৪শ’ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকায় কিনতে হয়েছে। অন্যান্য সার ও কীটনাশকের দামও চড়া। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ধানের আবাদ করবেন না বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা সার সমিতির (বিসিআইসি) সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম মন্ডল জানান, মাসের প্রথম দিকেই নন-ইউরিয়া সার শেষ হয়ে গেছে। ৯৪জন ডিলার তাদের চাহিদার মাত্র ৩০ ভাগ সার বরাদ্দ পেয়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পটাশ সারের প্রতি বস্তা খুচরা মূল্য ৭৫০ টাকা, টিএসপি ১১০০ টাকা আর ডিএপি ৮০০ টাকা। আমাদের ডিলারদের শনিবার মিটিং হয়েছে, কেউ যেন বেশি দামে সার বিক্রি না করে। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুচরা বিক্রেতারা সার সংকটের সুযোগ নিচ্ছে। এটা মনিটরিং করার দায়িত্ব সরকারের।

জেলা বিএডিসি সার সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় তাদের ডিলারের সংখ্যা ১৬২ জন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিলার প্রতি বরাদ্দ পেয়েছেন পটাশ ১০৭ বস্তা, টিএসপি ৫৯ বস্তা এবং ডিএপি ৫৬ বস্তা; যা এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক শামসুদ্দিন মিঞা জানান, চাহিদার তুলনায় সারের কম বরাদ্দ পাওয়ায় কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট কিছুদিনের মধ্যেই কেটে যাবে। দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  পাটের বাম্পার ফলনেও মলিন চাষির মুখ

এদিকে গত রোববার অতিরিক্ত মূল্যে রাসায়নিক সার বিক্রির অভিযোগে চিলমারী উপজেলায় দুই প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের বাজার তদারকি দল। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আনন্দ বাজারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে রাসায়নিক সার বিক্রির অভিযোগে চিলমারী উপজেলার নতুন জোড়গাছ বাজার এলাকার সার ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলামের ম্যানেজার নুর আলমকে ২০ হাজার টাকা এবং একই অপরাধে একই বাজারের ত্বহা ট্রেডার্স এর মালিক গওসুল আজমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে সতর্ক করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন