বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বিগুণ দামেও মিলছে না সার, বিপাকে চাষিরা

দ্বিগুণ দামেও মিলছে না সার

মাদারীপুর জেলার পাঁচ উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে আমন ধানের অন্যতম প্রধান সার এমওপি পটাশের ভয়াবহ তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলারদের কাছে দিনের পর দিন গিয়ে দ্বিগুণ দামেও কিনতে পারছে না সার।

জমিতে থাকা রোপা আমনের সঠিক সময়ে এমওপি পটাশ সার ব্যবহার করতে না পারলে ধানের ফলনই হবে না বলে জানালেন কৃষকেরা। তাই রোপা আমন নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছে মাদারীপুরের অন্তত ১০ হাজার চাষি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, মাদারীপুরের পাঁচটি উপজেলায় চলতি বছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে কয়েক প্রকারের ব্রি-৪৯, ৭২, ৭৫, ৮৭, ও বিনা-৭, ১৭, ৭৫ সহ বেশ কিছু জাতের রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। তবে, গত এক মাস ধরে যে জমিগুলোতে রোপা আমন লাগনো হয়েছে, সেই জমিতে ধান গাছের অন্যতম প্রধান সার এমওপি পটাশ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে, মাদারীপুরের সরকারি ডিলারের দোকানগুলোতে কৃষকেরা পটাশ সার কিনতে গেলেও সার পাওয়া যাচেছ না।

এ বিষয়ে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় রোপা আমন চাষির সঙ্গে কথা হয়। চাষিরা বলছেন, কিছু সার পাওয়া গেলেও বাধ্য হয়ে কেউ কেউ তা দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনে আনছেন।

মাদারীপুর জেলার নবগঠিত ডাসার উপজেলার পান্তা পাড়া গ্রামের রোপা আমন চাষি সাহেদ আলী তালুকদার বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান লাগিয়েছি। কিন্তু এখন জমিতে এমওপি পটাশ সার দেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কেঁচো সারে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

আমি ইতোমধ্যে তিনদিন মস্তফাপুরের বাজারে গিয়েও পটাশ সার কিনে আনতে পারিনি। সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের বাহেরচর কাতলা গ্রামের কৃষক মোজাম বেপারী বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে ১০ বিঘা জমিতে গোল আলু চাষ করেছিলাম। ওই জমিতে এখন রোপা আমন রোপন করেছি। তবে এখন ধান গাছের গোরা শক্ত ও গাছটিতে ফলন বাড়াতে এমওপি পটাশ সার দেওয়া দরকার। কিন্তু সার পাওয়া যাচ্ছে না। সার নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।

পটাশ সার নিয়ে কথা হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের গগনপুর গ্রামের কৃষক ফরহাদ শরীফের সঙ্গে। তিনি বললেন, দুই দিন গেছি সারের ডিলারের দোকানে। দোকানে গেলেই বলে সার নাই। তবে, এক খুচরা সার বিক্রেতার কাছ থেকে এক বস্তা পটাশ সার কিনে এনেছি। তাতে দাম লেগেছে ১৫’শ টাকা। আরো সার দরকার কিন্তু সার পাওয়া যাচেছ না। ধান নিয়ে বড় বিপদে আছি।’

তবে মাদারীপুরের সার ও বীজের ডিলাররা বলছেন, এমওপি পটাশ সার রাশিয়া থেকেই বেশি আমদানি করা হয়। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে এমওপি পটাশ সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা পটাশ সারের ক্রয়ের জন্য চালান জমা দিলেও সরকারি ভাবে সার সরবরাহ করতে পারছে না। তাই সার কৃষকদের দিতেও পারছে না। মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের মস্তফাপুর বাজারের সার ডিলার জগদীশ কুন্ডু ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী সদানন্দ কুন্ডু জানান, গত সপ্তাহে এমওপি পটাশ সারের জন্য চালান রশিদও ব্যাংকে জমা দিলেও গোডাউনে সার না থাকায় চালান ফেরত দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের স্যারেরা বলেছেন, ‘সার বরাদ্দ আসলেই খবর দিয়ে সার দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘পটাশ সার মূলত রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। যুদ্ধের কারণে সার আমদানি হচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ  আলু চাষে বিড়ম্বনা

এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে জেলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির বিপরীতে ১২’শ টন এমওপি পটাশ সারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই সার সংকট কেটে যাবে। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাদারীপুর জেলার জন্য ১২’শ টন পটাশ সারের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৩৫ টন। শীঘ্রই সারের বরাদ্দ এলে সার সংকট কেটে যাবে। তিনি আরো বলেন, কোন ডিলার যদি সার বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তাদের ডিলারশীপ বাতিল করা হবে।’

জানাগেছে, মাদারীপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের আওতায় বিসিআইসি ৬৪ জন ও বিএডিসি ৭২ জন সার ও বীজের ডিলারের মাধ্যমে মাদারীপুর সদর, ডাসার, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার কৃষকদের সার ও বীজ নায্যমূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন