ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষ আর্থিক অবকাঠামোয় নজর

দক্ষ আর্থিক অবকাঠামোয় নজর
  • টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে ব্যাংকখাত
  • প্রযুক্তির বিবর্তনে লেনদেনে আমূল পরিবর্তন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিবেশবান্ধব প্রকল্প যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তির প্রয়োগ, বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন ইত্যাদির উন্নয়ন করেছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের দিকে মনোনিবেশ করছে। এর লক্ষ্য একটি কার্যকর, গতিশীল এবং দক্ষ আর্থিক অবকাঠামো তৈরি করা, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। সম্প্রতি বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন-২০২২ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মহাপরিচালক বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনেক দূর এগিয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তির পথে যাত্রার পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ এবং এর বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা সুগম করার উপর জোর দিয়ে চলেছে।

মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সম্মেলনে শিক্ষাবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকার এবং অনুশীলনকারী ব্যাংকারদের দ্বারা উপস্থাপিত কাগজপত্র ব্যাংকিং শিল্পের অনেক জটিল সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। আমি নিশ্চিত যে আলোচকদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা নীতিনির্ধারকদের জন্য মূল্যবান ইনপুট তৈরি করবে।

ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বিআইবিএম ব্যাংকিং শিল্পে যোগদান করতে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং দক্ষতা অর্জনে সর্বোচ্চ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং দক্ষতা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থনৈতিক মুক্তির পথে যাত্রার সময় এ শিল্প অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনেক দূর এগিয়েছে।

এদিকে, বিআইবিএমের স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থার প্রধান অংশ হচ্ছে ব্যাংক। সময়কাল ধরে কার্যক্রম. উন্নত অর্থনীতি এবং অত্যাধুনিক বাজারের বিপরীতে, দেশের দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী উভয় ধরনের অর্থায়নের চাহিদা পূরণ করে ব্যাংক। এছাড়া দেশের আর্থিক অবস্থার আরো উন্নয়ন হয়েছে- নন-ব্যাঙ্ক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী, বীমা সংস্থা এবং ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার মাধ্যমে। ব্যাংকিং শিল্প বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। কর্মক্ষমতা সূচকের ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। এতকিছুর পরও দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের কিছু দুর্বলতা রয়েছে।

আহসান হাবীব বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে বিশ্ব ও দেশীয় বাজারে পণ্যমূল্যের গতিবিধি অনুসরণ করে। রাশিয়া কর্তৃক আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি বিশ্ব বাণিজ্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যদিও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এই চাপের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যর্থ হয়েছে। এতে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এমন চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশ আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। পরিস্থিতির কারণে ঋণগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ব্যাংকের মূলধনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

স্বতন্ত্র পরিচালক বলেন, এ সমস্যা থেকে উত্তরণে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য টেকসই অর্থনীতি বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া দরকার। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিষেবাগুলিকে প্রযুক্তির পাশাপাশি এটি পরিবেশবান্ধব করে তোলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এটি নীতিনির্ধারক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য পথ খুঁজে বের করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বিআইবিএমের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, দেশের ব্যাংকিংখাতের অবস্থা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এ খাত একটি জটিল পরিবেশে নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য ‘টেকসই ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করা এই পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেইসাথে প্রযুক্তির ব্যবহারও প্রয়োজন। প্রযুক্তির বিবর্তনের সঙ্গে, সমগ্র খাতেরই একটি বিশাল রূপান্তর ঘটেছে যেখানে অর্থ লেনদেনের পদ্ধতি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে এসেছে আমূল পরিবর্তন।

এসময় গভর্নর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ব্যাংকগুলোকে তাদের সুনাম বজায় রাখতে এবং গ্রাহক, বিনিয়োগকারী এবং নিয়ন্ত্রকদের আস্থা অর্জনের জন্য একটি ভালো কমপ্লায়েন্স সংস্কৃতি দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো কমপ্লায়েন্স কালচার আরও ভালোভাবে সাংগঠনিক এবং ব্যক্তিগত ঝুঁকি কভার করে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে উপকৃত করতে পারে। এছাড়া, কর্মীদের কাজের সময় আত্মবিশ্বাসী করে তোলা এবং তাদের কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে এই কালচার।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন