রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অজগাঁয়ে শিক্ষার আলো

অজগাঁয়ে শিক্ষার আলো

‘কুয়াকাটার উপকূলীয় এলাকায় তখন কোন কলেজ ছিলো না। বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছিল পণ্য তৈরির কারখানা করতে। আমি তাদের কথা রাখিনি। তৈরি করেছি মানবিক মানুষ তৈরির কারখানা। আজ আমি সফলতা পেয়েছি।’ বলছিলেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ জহিরুল ইসলাম খান।

জীবনের ৩৫ বছর জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসে কাটিয়েছেন তিনি। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহর ছাড়া সেসময় কোনো কলেজ ছিল না। এসএসসি পাস করার পর ওইসব কলেজে ভর্তি হলেও শুধুমাত্র থাকা খাওয়া অভিবাকদের সঠিক পরিচর্যার অভাবে ঝরে পড়ছে অনেক মেধাবী মুখ। সেই ভাবনা থেকে সাগরপাড়ের অবহেলিত জেলে, কৃষক ও পিছিয়ে পড়া রাখাইন সম্প্রদায়কে শিক্ষিত করে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ২০০০ সালে সাড়ে তিন একর জমিতে নিজ অর্থায়নে খানাবাদ গ্র্রামে গড়ে তোলেন কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ।

শুরুটা সুখকর ছিল না। সে সময় অনার্স ও মাস্টার্সধারী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকও পাওয়া যেত না। শিক্ষিত নিজস্ব আত্মীয়দের তিনি অনেকটা বাধ্য করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত করে পাঠদান চালু করেন। যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতি পেয়ে শুন্য থেকে শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা জহিরুল ইসলামের কষ্টার্জিত টাকায় চলতো প্রতিষ্ঠানের সকল ব্যয়ভার। সেই সময় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণসহ বিনা বেতনে পাঠদানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এরপর ২০০৪ সালে এমপিওর শর্তপূরণ সাপেক্ষে এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম উঠে আসে।

এরপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা পিছু ছাড়েনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ৪শ’ থেকে ৫শ’ শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানে চালু রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ, বিএসএস, বিবিএস কোর্স, উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসিও ডিগ্রি কোর্স।

আরও পড়ুনঃ  সাজেকে আগুনে পুড়লো তিন রিসোর্ট

কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মনিরুজ্জামান বলেন, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজটি গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে জেলার অন্যসব প্রতিষ্ঠান থেকে এগিয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিএনসিসি নৌ-শাখা, রোভার স্কাউট, কেকেসি ডিবেটিং সোসাইটি. ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, কন্ঠস্বর বাচিক চর্চাকেন্দ্র, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। প্রতি বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ শেষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইবেরি থেকে বই সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে ৭৫ জনের একটি জনবল কাঠামো।

কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ¦ জহিরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিষ্ঠানে সকল ধর্ম-বর্ণের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। এখানকার প্রতিটি ঘরে এখন শিক্ষিত জনবল। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে নিজের সফলতা খুঁজি ওইসব সন্তানদের মাঝে।

খাজুরা গ্রামের জেলে দুলাল আকন জানিয়েছেন, তার বড় ছেলে শাহজালাল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ফিনান্স বিভাগে বিবিএ পড়ছে। ওই কলেজ থেকে চলতি বছর অপর ছেলেও এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। প্রতিষ্ঠানটি যদি তার ছেলেদের দায়িত্ব (ফ্রি পড়াশোনা) না নিত তার মতোই শাহজালালকে জেলে পেশাই বেঁচে নিতে হতো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে বিবিএ-এমবিএ উত্তীর্ণ ও রাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন বিপ্লব বলেন, এসএসসিতে জিপিও-৫ পেয়ে বরিশাল অমৃত লালদে কলেজে ভর্তি হয়ে ছিলাম। পরবর্তীতে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে বদলি হয়ে না আসলে শিক্ষা জীবন ওইখানে সমাপ্তি ঘটতো।

কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাহবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, এক সময়ে বিত্তবান পরিবারের মেধাবী সন্তানদের ভর্তি করতো অন্যত্র। এখন সকল পেশাজীবীদের আশা জায়গা তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠনটি।

আরও পড়ুনঃ  নবগঙ্গা সেতু নির্মাণে ধীরগতি

কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিএম সাইফুর রহমান বলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতাসহ পরিচালনা পর্ষদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ, ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যবসায়, শিক্ষকদের পাঠদানের কৌশল এবং সর্বোপরী অভিভাবকদের সচেতনতাই মানুষ গড়ার কারখানায় আমরা কাজ করছি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন