রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাস্তা দখল করে সার কারখানা নির্মাণ

রাস্তা দখল করে সার কারখানা নির্মাণ
  • যাতায়াতের পথ বন্ধে
  • ৫শ পরিবারের ভোগান্তি

নীলফামারীর ডিমলায় জৈব সার কারখানা স্থাপন করে সর্বসাধারণের চলাচলের সরকারি মৌজা ম্যাপের রেকর্ডকৃত রাস্তা দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনেল বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি ছাতুনামা এলাকায় একটি জৈব সার কারখানা স্থাপন করে। তারা মালিকানা জমিসহ সরকারি রাস্তা দখল করে কারখানার ভবন নির্মাণ করে। এতে নির্মাণাধীন মুজিব কেল্লা, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাসহ কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানায়, তালতলা বাজার থেকে মুজিব কেল্লার পাশদিয়ে ১৪ ফুট চওড়া একটি সরকারি মৌজা ম্যাপের কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে আশপাশের অন্তত পাঁচশত পরিবার উপজেলা সদর ও মূল রাস্তায় যাতায়াত করেন। এছাড়া মুজিব কেল্লা ও আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের  যাতায়াতের জন্য একমাত্র রাস্তা এটি।

স্থানীয় বাসিন্দা জমশের আলী বলেন, রাস্তাটি কাঁচা মাটির হলেও, এলাকাবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ রাস্তা দিয়ে আমরা মসজিদে যাই, ফসলি জমিতে যাই, ভ্যান গাড়িতে ফসলসহ প্রয়োজনীয় মালপত্র বাজারে নেই। তিস্তা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় আমাদের বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।

আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা সুরুজ্জামান জানান, হামরা ভূমিহীন মানসি। প্রধানমন্ত্রী হামাক জমিসহ বাড়ি দিছে। কিন্তু আস্তা না থাকিলে যাতায়াত করমো ক্যামন করি। এছাড়াও কারখানার বর্জ্যের দুর্গন্ধে আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করা যায়না বলে জানান তিনি।

জামাল হোসেন, নাজমুলসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাস্তা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই প্যারগন কোম্পানির লোকজন মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এখন পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ জন এলাকাবাসীকে মামলা দিয়ে ঘর ছাড়া করেছে তারা।

আরও পড়ুনঃ  সোনাগাজীর অসহায় মানুষের পাশে শিক্ষার্থীরা

আব্দুর রহিম নামের এক বাসিন্দা জানান, আমরা সাধারণ মানুষ। প্যারাগন কোম্পানি অনেক শক্তিশালী, তাদের অনেক টাকা। সাধারণ মানুষকে তারা মানুষ মনে করেন না। আমরা গরীব সেজন্য সরকারি রাস্তায় দখল করে কারখানা বানাবে বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। এখন যাতায়াতের রাস্তা না থাকলে কোথায় যাবো?

উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মানুষের সুবিধার জন্যই রাস্তা নির্মাণ করে সরকার। সেই রাস্তা দখল করে সার কারখানা নির্মাণের ফলে গ্রামবাসীর যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এসএ খতিয়ানে এটি সরকারি রাস্তা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। শুধু প্রভাব খাটিয়ে প্যারাগন কোম্পানি রাস্তার উপর কারখানার ভবন করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পর্যায়ে শালিস বৈঠক করেও কোনো ফল হয়নি। জৈব সার কারখানার ম্যানেজার সারোয়ার আলম জানান, কোম্পানি কোনো রাস্তা দখল করেনি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ঝুনাগাছ চাপানী  ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, প্যারগন এগ্রো লিমিটেড সরকারি ম্যাপের রেকর্ডকৃত রাস্তা বেদখল করে সার কারখানা গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন দফতরে তদবির করেও রাস্তাটি দখলমুক্ত করা যায়নি। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন,প্যারগন কোম্পানির কার্যক্রমের কারণে এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াত, চাষাবাদ ও জীবনযাপনে নানারকম বিপত্তি ও প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকার ও জানমাল রক্ষার নিমিত্তে প্যারগন কোম্পানির যাবতীয় কার্যক্রমের বৈধতা নিরুপনের দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ  ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভোলায় দুজন সহ মোট ৪ জনের মৃত্যু

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ।

সংবাদটি শেয়ার করুন