বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জোয়ারে কপোতাক্ষের পানি উঠানে

জোয়ারে কপোতাক্ষের পানি উঠানে
  • জেলেপল্লীতে সীমাহীন দুর্ভোগ
  • জলাব্ধতা নিরসনে টেকসই বেঁড়িবাধ নির্মাণের দাবি

পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে রাতে ও দিনে দুইবার ডুবছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নে জেলে পল্লী। ডুবা-জাগার সঙ্গে ভাঙন আতংক ঝুঁকি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন জেলে পল্লীর ১৫০ পরিবার। তাদের বাড়ি ঘর রক্ষায় নেই কোনো টেকসই বেঁড়িবাঁধ। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনরোধে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই বেঁড়িবাধ প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ইউনিয়নবাসী।

কপোতাক্ষ নদের তীরে রাড়ুলী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে জেলে পল্লী প্রায় শত বছর ধরে ভাঙন রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। জেলে পল্লীর মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, আমাদের পূর্বপুরুষ মিলে এখানে প্রায় ২শ’ বছর ধরে বসবাস করে আসছি। কপোতাক্ষ পাড়ে জেলে পল্লীতে আমরা প্রায় ৫শ’ পরিবার বসবাস করতাম। তবে, ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ৩৫০ পরিবার অন্যতরে চলে গেছে। কেউ রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে আবার কেউ সরকারের আবাসনে ঠাঁই মিলেছে। আমার ঘর ভেঙ্গে গেছে। আমি পাশে একটি সরকারি রাস্তার পাশের একটি টংঘরে বসবাস করছি। বর্তমানে ভাঙনে কূলে ১৫০ পরিবার বসবাস করছে। একই এলাকার বাবুরাম বিশ্বাস (৫৫) বলেন, কপোতাক্ষ নদে ভাঙনে আমি তিনবার ঘর ভেঙ্গে ঘর তৈরী করেছি। বর্তমান ঘরটি ভেঙে যাওয়ার পথে। নদে রান্না ঘর চলে গেছে থাকার ঘরটি টিকে থাকলেও ঘরটি নদের কিনারায় ঝুঁলছে। জোয়ারের পানিতে রাত-দিন দুইবার ডুবছে আমাদের ঘরবাড়ি। জোয়ারের সময় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভয়ে রাত জেগে বসে থাকি। কখন ঘরখানী নদী নিয়ে যায়। বর্তমানে পূর্ণিমার অতিরিক্ত পানি বাড়ায় আমাদের ঘরবাড়ির উঠানে থইথই পানি। দুপুরে রান্না হয়নি। ভাটায় পানি সরে গেলে রান্না হবে। অনেক সময় আমরা রান্না করতে না পারায় শুকনা খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করি। নদের পাশে বাড়িঘর রক্ষার বাঁধ থাকলে জোয়ারের পানি উঠতো না। মান্দার বিশ্বাস (৬৭) বলেন, কপোতাক্ষের পাড়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করে আসছে। প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গা কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে চলে গেছে। বিপরীত পাড়ে চর জেগেছে। সেখানে যদি আমাদের জায়গা দিতো তাহলে আমরা বসবাস করতে পারতাম। ভাঙন দেখতে শুধু জনপ্রতিনিধিরা আসে। তবে কোনো কাজ হয়না।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে- 'মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস' পালিত

এ ব্যাপারে রাড়ুলী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন জানান, ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি। রাড়ুলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পাইকগাছা-কয়রা সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ভাঙনের বিষয় নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে চলতি বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ হয়নি, বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ভাঙন এলাকায় গিয়েছি। তবে ভাঙনের কারণে জেলে পল্লী রক্ষা বাঁধ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেপানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন