বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোখাদ্য-হাটের শঙ্কায় খামারিরা

গোখাদ্য-হাটের শঙ্কায় খামারিরা
  • পশুর হাটের স্থান সংকটে বন্যাদুর্গত এলাকা
  • জেলায় কোরবানির পশুর ঘাটতি ৮ হাজার

দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় মৌলভীবাজারের বানভাসিদের দিন কাটাছে চরম দুর্ভোগে। নিজেরাই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রিত হয়ে আছেন। পাশাপাশি অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাচ্ছে পালিত পশুরও। গবাদি পশু গুলোরও খাদ্য ও বাসস্থান সমস্যায় নিয়ে কাটছে চরম দুর্ভোগ। প্রায় ১৫ দিন যাবৎ চলছে বন্যা তবুও পরিস্থিতি রয়েছে অনেকটাই অপরিবর্তিত। পানি অল্প করে কমলেও থেমে থেমে বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে একই রয়ে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এখন বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে।

জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা কমবেশি বন্যা আক্রান্ত। পাশাপাশি গৃহপালিত পশু গুলোর বসতভিটাও পানিতে নিমজ্জিত। সবকিছু মিলিয়ে এবার জেলাজুড়ে পশুর হাট বসা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বানের পানিতে কৃষি ক্ষেত ও রাস্থাঘাট ডুবে যাওয়াতে এখন গো-খাদ্য চরম সংকটে পড়েছেন জেলার নদী ও হাওর পাড়ের কৃষিজীবীরা। যা তীব্র হচ্ছে প্রতিদিন। বানের পানিতে ঘাস ও ক্ষেতের জমি নিমজ্জিত। তাই গবাদিপশুগুলোর খাদ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আর ধানের শুকনো খড় আর কুড়োও বানের পানিতে পঁচে যাওয়ায় বন্যার্তরা গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। তাই চারদিকে এখন গো খাদ্যের শুধুই হাহাকার।

সরেজমিনে গেলে রহিম মিয়া (৪৭) জাহেদ মিয়া (৪২) জলিল মিয়া (৩৯) সহ আরো স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘরে নিজেদের খাবার নেই। ইতোমধ্যে আউশ ও সবজি ক্ষেতের জন্য মহাজন ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ আনায় পাওনাদারদের তাগিদ আসছে বার বার। বাড়ির আশপাশে গুরু মহিষ রাখার মতো কোনো জায়গাও নেই। আশপাশ এলাকায় যাদের আত্মীয়স্বজন বন্যাকবলিত নয় অথবা চা বাগান এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর অনেকেই নিজ এলাকার উঁচু স্থানে অথবা আশ্রয়কেন্দ্র গাদাগাদি করে গরু, ছাগল ও মহিষগুলো রেখেছেন বন্দি অবস্থায়। অন্য কোথাও থেকে যে খড় কিনবো সেই টাকা পয়সাও হাতে নেই। চোখের সামনে পোষা প্রানী গুলোর এমন কষ্ট সহ্য হয় না।

আরও পড়ুনঃ  শেষ রাতে বৃষ্টি হবে, একই সঙ্গে বাড়বে কুয়াশা

তারা আরও জানান, কোরবানির জন্য মূলত গরুগুলো প্রস্তুত করেছিলাম। এখন হাট বসা নিয়েই সংশয় তাই যা পাই তাতেই বিক্রি করে দেব। সারাবছর ধরে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা গরুও শেষ মুহূর্তে এসে ভাল দামে বিক্রি না করতে পারার আক্ষেপটা সারা বছর পুড়াবে বলেও যুক্ত করেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন্যার কারণে হাকালুকি হাওর পারের অনেক পশুর বাজার তলিয়ে থাকায় আর প্রবাসীরা কোরবানির চেয়ে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বেশি আগ্রহী হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, কোরবানির ঈদের মাত্র ৬ দিন বাকি অথচ বন্যার কারণে মৌলভীবাজারে এখনো জমেনি কোরবানির পশুর হাট। যেখানে অন্যান্য বছর এই সময়টায় পশুর হাটে পা ফেলার জায়গা থাকে না এবছরের চিত্রটা সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। গতকাল সরেজমিনে গেলে এমন চিত্রই দেখা যায়।

একাটুনা ইউনিয়নের কিবরিয়া ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ কিবরিয়া জানান, চলতি বছর তিনি ৩টি কোরবানির পশু লালন পালন করেন। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন সবচেয়ে বড়টি মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকায় । অথচ এমন একটি গরু গত বছর ৪ লাখের বেশি টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ সময় তার বাকি ২টি কোরবানির গরু এখনও বিক্রি করতে পারছেন না। তাছাড়া এখন গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি তাই গরু লালন পালন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও যুক্ত করেন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হাকালুকি হাওর পারের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, সারা ইউনিয়নে শুধু পানি আর পানি। যেভাবে পানি নামছে হয়তো গ্রামে ঈদের নামাজ পড়া যাবে না বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরা জানান, তার ইউনিয়নের ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে নবাবগঞ্জ বাজারে কোরবানির পশুর হাট বসত। প্রচুর বিক্রি হত। কিন্তু চলতি বছর পশুর হাট বসে কি না সন্দেহ আছে।

আরও পড়ুনঃ  ধর্মপাশায় যুব মহিলা লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন

কুলাউড়া জুড়ী বড়লেখা সহ হাকালুকি হাওড় পারের গ্রাম গুলোতে গত ১৫ দিন যাবত পানি। এসব গ্রামের লোকজন জীবন জীবিকার লড়াইয়ে। ফলে কোরবানি নিয়ে ভাবার সময় নেই বলে জানালেন দুবাই প্রবাসী সাহেদ ইসলাম।

কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর হোসেনপুর ফরিদপুর মনসুর ছকাপন গ্রামের ২০-৩০ জন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রতিবছর বড় বড় গরু খাসি কোরবানি দিতেন। তাদের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে ত্রাণ হিসেবে বড় অংকের অর্থ তারা দেশে পাঠিয়েছেন। ফলে এখন কোরবানি নিয়ে তাদের তেমন আগ্রহ নেই। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে আশ্রয়কেন্দ্র গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য ২৭৩৯টি গৃহপালিত পশু আশ্রয় নিয়েছে।

জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া কবির জানান, জেলার ৭ উপজেলায় চলতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ৭২ হাজারের বেশি। অথচ এখানে লালন পালন হচ্ছে ৬৪ হাজারের মতো কোরবানির পশু। সেদিক থেকে এখানে কোরবানির পশুর ঘাটতি রয়েছে ৮ হাজারের মতো।

এ সময় বন্যাকবলিত এলাকার গবাদিপশুর জন্য কীভাবে এই আপদকালীন সময়ে খাদ্য সংগ্রহ করবেন ও খাওয়াবেন সে দিকনির্দেশনার সঙ্গে পানিবাহিত নানা রোগবালাই থেকে রক্ষায় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন