ঢাকা | বুধবার
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ গ্রামের ভরসা নৌকা

বিশ গ্রামের ভরসা নৌকা

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের বৈরান নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়ায় ২০ গ্রামবাসীর আবারও দুর্ভোগে পড়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে দুই পাড়ে নৌকাতে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতুটি নির্মিত হলেও বছর না ঘুরতেই ভেঙে পড়ে। ওই স্থানে আবারও সেতু নির্মাণে দাবি তুলে আসছে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণ অনিয়মে কাজ শেষ করে প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বালু খেকুরা সেতু নির্মাণের পরপরই সেতু সংলগ্ন স্থান থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলে বিক্রি করে। নির্মাণের কিছুদিন পর থেকে সেতুর রেলিং ভাঙতে শুরু করে। বালু তোলার ফলে সেতুর মাঝখানে দেবে যায়। ফলে নিচের গার্ডার ও পাটাতনে ফাঁটল ধরে।

এছাড়া তাঁরা আরও বলেন, কৃষি অঞ্চলের জন্য ইউনিয়নটি গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার শিক্ষার্থীরা উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করতো। সেতুটি ভাঙা কারণে দুর্ভোগ নেমে আসেছে গ্রামবাসীদের।

ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে ওই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কাজ করে স্থানীয় এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের বৈরান নদীর ওপর নির্মিত ভেঙে পড়া সেতু। হালকা পিলারে করা হয়েছিল লম্বা সুরু সেতুটি। এপাড়ে ভাতকুড়া আর ওই পাড়ে দরিচন্দ্রবাড়ী দক্ষিণপাড়া গ্রাম। সেতুটি ভেঙে পড়ায় দুই পাড়ে যোগাযোগ সচল রাখতে ছোট একটি নৌকা।

নৌকাতে যাওয়া-আসা করছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, কৃষক,কৃষাণী, কর্মজীবি, শ্রমজীবি ও বয়োবৃদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ গ্রামবাসী। নৌকাতে চার-পাঁচ জনের ধারণ ক্ষমতা। ওই পাড়ের গ্রামবাসীরা নদী পার হয়ে পাঁকা সড়ক ধরে চলে আসছেন উপজেলা সদরের বিভিন্ন কাজে। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পাশের বসতিবাড়ি ও কৃষি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজনু মিয়া, হান্নান মিয়া বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের সময়ই নিম্নমাণের কাজ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। উপজেলার ইঞ্জিনিয়াররা বিষয়গুলো দেখেও এড়িয়ে যায়। ওই ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।’

ভাতকুড়া গ্রামের বাসিন্দা অতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সেতুটি হওয়ার পরপরই বালু খেকু আরেক প্রভাবশালী সেতুর পাশ থেকে অবাধে বালু তুলে বিক্রি করে। বালু তোলার ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে যায়। নদীর আশপাশের অবাদি জমি ও বাড়িভিটে ভেঙে শুরু করে।’

অপর কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারের বর্ষাতে সেতুটি ভেঙে পড়ে। দুই পাড়ের যোগাযোগ সচল রাখতে এলাকাবাসী ডিঙি নৌকা কিনে চলাচলের ব্যবস্থা করে। আমাদের একটাই দাবি সেতু নির্মাণ করে দেয়ার।’

নদী গর্ভে বাড়ির আঙিনা চলে যাওয়া ভুক্তভোগী শমছের আলী ও নেপাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘প্রতিনিয়ই বাড়িভিটে ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

স্কুল শিক্ষার্থী লিমন মিয়া, সাদ্দাম হোসেন ও হ্যাপি আক্তার বলেন, ‘এলাকার শিক্ষার্থীরা সদরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। সকাল-বিকাল নৌকা ঘাটে বেশি চাপ পড়ে। দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।’

পাইস্কা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, ‘সেতু নির্মাণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশ্বস্ত করেছেন সেতু নির্মাণে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় (এলজিইডি) প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন সাগর বলেন, সেতুটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে এডিবিতে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেতু নির্মাণ করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন