ডালিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের স্তূপ করা কোটি টাকার বালুতে চলছে হরিলুট কারবার। ফ্লাড বাইপাস সড়কসহ বিভিন্ন প্রকল্পে এসব বালু দিয়েই কাজ করছে ঠিকাদাররা। এতে করে সরকার রাজস্ব হারালেও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন এলাকার অসাধু ব্যক্তিরা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ডালিয়া পাউবো কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে তিস্তার সীলটাপ সহ পাউবোর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৫টি নদী-খাল-পুকুর খননের কাজ বরাদ্দ দেয়া হয়। নদী খনন করা হয় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে। ড্রেজার মেশিনের বালু তিস্তা নদী ও পুকুরের ধার ঘেঁষে ওপরের জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। নদী খননের সময়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রচার করা হয়, পাউবো’র নদী খননের স্তূপ করা বালু সরকারী সম্পদ। এই বালু কেউ বিক্রি করতে পারবে না, যদি কেউ বালু বিক্রি কিংবা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।কিন্তু খনন কাজ শেষের প্রায় বছর খানেক হলেও ইজারা দেয়ার দরপত্র আহ্বানে গড়িমসির কারণে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ডালিয়া ব্যারাজ সংলগ্ন অবসর ভবনের পাশেই স্তূপ করা সরকারি বালুতে দিনেদুপুরে চলছে হরিলুট কারবার।পাশেই ৫ কোটি টাকা বরাদ্দে ডালিয়া ব্যারাজের ফ্ল্যাড বাইপাসের ৬১০ মিটার রাস্তা কার্পেটিং এর কাজ চলছে ।কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। দরপত্রে বালুর বরাদ্দ থাকলেও এ কাজের জন্য বালু ক্রয় না করে পাউবো’র নদী খনন প্রকল্পের স্তুপ করা সরকারি বালু দিয়েই কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, ও পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব বালু দিনেদুপুরে লুটপাট হচ্ছে। প্রতি ট্রলি বালু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে।এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে নানা ধরনের সিন্ডিকেট।
বালু বহনকারী ট্রাক্টর শ্রমিক শাহীন বলেন, আমরা পেটের দায়ে ট্রাক্টর চালাই। মাটি ও বালুর ভাড়া মেরে সামান্য আয় করি। ঠিকাদারের কথাতেই সরকারি কাজে সরকারি বালু উত্তোলন করছি।পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা সব জানে।ডালিয়া গ্রামের এক ট্রাক্টর মালিক বলেন, বালু লুটেরারা বালু বিক্রি করে আর আমরা ভাড়ার বিনিময়ে গাড়ি দেই। একজন বালু ব্যবসায়ী দিনে প্রকাশ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার বালু বিক্রি করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের সামনেই বালু লুট হচ্ছে অথচ প্রশাসনের চোখে আমরাই চোর, আর বালু লুটেরারা ভাল মানুষ।
চোখের সামনে বালু লুটের ব্যাপারে জানতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।
গাড়ি চালক রবিউল জানান, ডালিয়া পাউবোর অনুমিত নিয়ে বালু বহন করা হচ্ছে ফ্লাড বাইপাস এ। কিছু জানার থাকলে প্রকৌশলীকে ফোন দেন, এসও কে ফোন দেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাউবো ডালিয়া অফিসের এলাকাজুড়ে খননের কোটি টাকার বালুর স্তূপ ছিল। শুধুমাত্র প্রশাসনের তদারকির অভাবে বেশির ভাগ বালুই লুট হয়েছে। এতে করে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারালেও অসাধু ব্যক্তিরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।
কাজটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির জানান, ঠিকাদারকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে নদী খননের বালু ব্যাবহার বন্ধ করা হয়েছে। বালুর স্তূপে করা পাহাড়া বসানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে ডালিয়া পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলাকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন,সরকারি সম্পদ এসব বালু দিয়ে ঠিকাদারের কাজ করার এখতিয়ার নেই। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে সেখানে প্রতিনিধি পাঠানোর কথা বলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও দেখা মেলেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের।