ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনে আগুন জ্বালিয়ে শুটিং

বনে আগুন জ্বালিয়ে শুটিং

দেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আগুন জ্বালিয়ে ও ধোঁয়া উড়িয়ে বহুজাতিক কোম্পনির বিজ্ঞাপনের শুটিং করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বনের প্রাণিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি ধোঁয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্টের দাবি করছেন স্থানীয়রা। একইসঙ্গে শুটিং ইউনিটের বিশাল বহরে থাকা মানুষের চলাচল আর ছুটাছুটিতে বনভূমি নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সূত্রমতে, গত বুধবার একটি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে ছিল প্রায় ১০০ জনবল, ৮টি প্রাইভেটকার, দুটি জেনারেটর, দুটি পিকআপ। বিশাল সেই বহর নিয়ে তারা কোনো লিখিত অনুমতি ছাড়াই সংরক্ষিত বনের ভেতরে ঢুকে পড়ে।

সরেজমিনে লাউয়াছড়া বনে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষিত বনের মধ্যভাগে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুটিংস্পট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ছড়ার পাড়ে তাঁবু টাঙ্গিয়ে বসেছেন প্রোডাকশন ও মেশিনম্যানরা। পাশেই একটি পিকআপে সচল রাখা হয়েছে ৩৫ কিলোওয়াটের জেনারেটর। প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে জেনারেটরের বিকট সেই শব্দ।

ছড়ায় নেমে শুটিং করছেন বিজ্ঞাপনের মডেল। তার সঙ্গে রয়েছেন অন্তত ৩০-৪০ লোকজন। ছড়ার পাড়ে তিনটি টিনে আগুন জ্বালিয়ে তৈরি করা হয়েছে ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে শুটিংস্পট ছাড়াও আশপাশের এলাকা। এর মধ্যেই আবার জ্বালানো হয়েছে তীব্র আলোর লাইট। শুটিংয়ের সময় অংশগ্রহণকারীরা ছুটাছুটি করছেন বনের গহীনে ও ছড়ার পাড়সহ আশেপাশে। এতে মানুষের পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছে বনের তৃণ-লতাগুল্ম। ভেঙে ও হেলে পড়ছে ছোট ছোট গাছের চারা।

শুধু তাই নয়, গভীর বনের ভেতরই সিলিন্ডারের গ্যাসে আগুন জ্বালিয়ে রান্নার উৎসব চলছে শুটিং ইউনিটের দুপুরের খাবারের জন্য। রয়েছে চা পানের ব্যবস্থা। অতি উৎসাহী বনকর্মী ও কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যরা বিভিন্ন কাজে শুটিং ইউনিটকে সাহায্য-সহযোগিতাও করছেন। সেই সকাল থেকে বনে গবেষণার কাজ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষক বিভাগের শিক্ষার্থী শিমুল নাথ। বনের ভেতর এভাবে শুটিং করতে দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে শিমুল নাথ বলেন, লাউয়াছড়া বনে কোনোভাবেই শুটিং করতে দেয়া উচিত নয়। প্রাণিরা বনের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নয়, পুরো বনে ঘুরে বেড়ায়। আর এখন বর্ষা মৌসুম, বনের অনেক প্রাণির বাচ্চা দেয়ার সময়। শুটিংয়ের কারণে প্রাণী ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

সেই শুটিং ইউনিটের লাইটম্যান আলমগীর জানান, বনে এক হাজার ওয়াটের ২৭টি বাল্ব জ্বালানো হয়েছে। আর ছড়ায় ৩০০ ওয়াটের একটি জেনারেটর চালানা হচ্ছে। আলো না জ্বালালে তো অন্ধকারে শুটিং করা যাবে না।

শুটিং ইউনিটের লাইন ডিরেক্টর এমবিএ রন্টু বলেন, আমরা মৌখিক অনুমতি নিয়েই শুটিং শুরু করেছি। তবে বনবিভাগ আমাদের শুটিং করার নিয়ম বলে দেয়নি। এভাবে আগেও আমরা শুটিং করেছি।

জানতে চাইলে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া উড়ানো, জেনারেটরের শব্দ, লাইট জ্বালানো-সবকিছুই বন ও প্রাণির জন্য ক্ষতিকর। এক কথায় লাউয়াছড়ায় শুটিং করাই উচিত নয়।

প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, বনবিভাগের এটা করা উচিত হয়নি। মাত্র তিনদিন আগে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ, বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কথা বলেছেন। আর তিনদিন পরই কী করে বনবিভাগ লাউয়াছড়ার মত এক পাবলিক বনে এ কাজ করতে পারল?

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, আমাকে জানিয়ে বনে প্রবেশের দরকার নেই। রেভিনিউ জমা দিয়ে শুটিং করার নিয়ম আছে। তবে, আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দেয়া বা লাইট জ্বালানোর নিয়ম নেই। এটা তারা করতে পারে না। এতে বন ও বনের প্রাণির ক্ষতি হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন