শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ি জনপদে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

পাহাড়ি জনপদে বিশেষ বরাদ্দের দাবি
  • জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩

পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে ভারত সীমান্তঘেঁষা শেরপুর জেলা। এ জেলায় বাস করে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, গারো, কোচ, ডালু, হদি, বর্মণ ও বানাইসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি জেলার সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাগুলোতে। তাই ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উন্নয়ন খাতে বিশেষ বরাদ্দ চায় পাহাড়ি এই জনপদের মানুষরা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১ হাজার ৩শ ৬৩ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। এরমধ্যে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত এলাকাজুড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস। এরমধ্যে গারো ১৬ হাজার ৫শ, হাজং ৪ হাজার ৭শ, হদি ১০ হাজার ৬শ, বর্মণ ১৭ হাজার, কোচ ৩ হাজার ৫শ , ডালু ১ হাজার ১শ ,বানাই ১শ ১০জন মানুষ বাসবাস করছেন।

গারো পাহাড় অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী এই জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। জেলা ব্র্যান্ডিং তুলশিমালা সুগন্ধি চালসহ নানা কৃষিপণ্য জেলার বাইরে পাঠাতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাস্তা-ঘাট, স্বাস্থ্যসেবা, রেলপথ নির্মাণ, শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী

দীর্ঘদিনের হলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও জেলা সদর থেকে ময়মনসিংহ ৪ লেনসহ জেলা শহরে কয়েকটি জায়গায় রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। তবে, সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নেই যাতায়াতের রাস্তা, নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানেটারি ব্যবস্থা, নেই ক্ষুদ্র ন-ৃগোষ্ঠীদের জন্য কোনো চিকিৎসাসেবা। ফলে দুর্ভোগে আছে সেখানকার মানুষ। ৭০ দশকের শেষ দিকে জামালপুর-রাংটিয়া

আরও পড়ুনঃ  লিচুগাছের সেই আম ছিঁড়ে নিলেন মেম্বার

রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালের ৮ জুন তৎকালিন রেলমন্ত্রী জেলা শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ঘোষণার ৭ বছরেও রেলপথ নির্মাণের কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আশপাশের জেলায়

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও শেরপুরে তা হয়নি। তাই এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে জেলার দাবীগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবী জেলাবাসীর।

জেলার মোবারকপুর এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘ ছোটবেলা থেকে  শুনছি শেরপুরে রেললাইন হবে। আজো তা আলোর মুখ দেখেনি। এজন্য আমরা খুব হতাশ। তাই এবারের  বাজেটে সরকার শেরপুর জেলাকে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে আমাদের প্রত্যাশা পুরণ করবে ।’

জেলা শহরের শেরীপাড়ারা এলাকার আরজু মিয়া বলেন, ‘আমাদের জেলায় ধান, সবজিসহ কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। আর এসব কৃষিপণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। দুঃখের ব্যাপার সব জেলার উন্নয়ন হলেও আমাদের জেলার তেমন কেনো উন্নয়ন হচ্ছে না।’

শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী খারামোরা গ্রামের সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের খারামোরা নদীতে এখনো একটা ব্রিজ হয়নি। এখন ভেবে দেখেন আমরা কতো কষ্টে আছি। বাজারে টিভিতে খবর দেখি সবজায়গায় উন্নয়ন হচ্ছে । তবে আমাদের এলাকায় কোনো উন্নয়ন নেই।’

সীমান্তবর্তী বাবলাকোনা গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা মারাক বলেন, ‘আমাদের গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন এনজিও অফিস রয়েছে। এখানে অনেক কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। আমাদের পাকা রাস্তা নেই। কাঁচা দিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। বর্ষারদিনে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল খুবই দুরুহ। আমরা পাকা রাস্তা চাই।”

আরও পড়ুনঃ  ধীরগতিতে ফেরি পারাপার চলছে, পারের অপেক্ষায় ৭ শতাধিক গাড়ি

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের শেরপুরের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শেরপুরে রেললাইন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন দাবীতে আমরা একাধিকবার মানববন্ধন করেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় শেরপুর এখনো অনেক পিঁছিয়ে আছে। তাই এবারের বাজেটে শেরপুর জেলার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে হলেও শেরপুরে উন্নয়ন চাই।’

শেরপুর সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা বলেন, ‘সত্যি বলতে শেরপুর জেলা শহরে উন্নয়ন হলেও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। পাশপাশি জেলায় এখন পর্যন্ত রেললাইন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়নি। অথচ পাশের জেলা জামালপুরে যতটা উন্নয়ন হয়েছে তা শেরপুরে হয়নি। তাই বিশেষ বরাদ্দ রেখে এবারের বাজেটে শেরপুর জেলার উন্নয়ন দাবি করছি।’ শেরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকারের কাছে দাবি, সীমান্তবর্তী শেরপুরবাসীর স্বপ্নপুরনে জেলায় যেন এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমাদের জেলায় মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও রেললাইন স্থাপন করা খুবই জরুরি।

সংবাদটি শেয়ার করুন