রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতুর সঙ্গে উদ্বোধন হচ্ছে না কালনা সেতুর

পদ্মা সেতুর সঙ্গে উদ্বোধন হচ্ছে না কালনা সেতুর

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নড়াইলবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি হবে দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মক্ত করে দেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলেও কালনা সেতু উপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে জুলাই মাস পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার। সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। বর্ষায় পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং নদীর মাঝখানে সেতুতে যান চলাচলের জন্য ১৫০ মিটার ফাঁকা থাকছে। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  বিদেশ ফেরত যুবকের বিয়ে বন্ধ করল প্রশাসন

জানা যায়, দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু এটি। পদ্মা সেতু চার লেনের। দেশের সবচেয়ে বড় নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু, যা হবে দৃষ্টিনন্দন। পদ্মা সেতুর পাইল ক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। তবে এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌ-যানচলাচল সমস্যা হবেনা, পলি জমবেনা এবং নদীর স্রোত কম বাঁধাগ্রস্ত হবে।

সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এটি এ এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু। এ সেতু চালুহলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর ওয়াপাড়া, বেনাপোল স্থলবন্দর ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বলেন, নড়াইল জেলা একটি কৃষি প্রধান জেলা কালনা সেতু চালু হলে আমাদের এ আঞ্চলের মানুষের জীবন মান এবং অনৈতিক উন্নয়ন হবে। সল্প সময়ে আমরা মালামাল পরিবহন করে ঢাকায় যেতে পারব। দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর বেনাপোল দিয়ে মালামাল আমদানি-রপ্তানিতে সুবিধা হবে। পদ্মাসেতুর সেতুর সঙ্গে কালনা সেতু করায় নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরন করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নড়াইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে কাজের ৮৮ ভাগ গাজ সম্পন্ন হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে জনসাধারনের জন্য সেতু উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাচ্ছেন আরও ২৬ হাজার পরিবার

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করার পর টানা ৫ বছর অতিবাহিত হলে ও সেতুটি নির্মাণ করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর ২য় দফায় সরকার গঠন করার পর নতুন সরকারের একনেক প্রথম সভায় ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন দেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন