রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনের হাতছানি ‘রক্তদহ বিল’

পর্যটনের হাতছানি ‘রক্তদহ বিল’

রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী–

বগুড়ার আদমদীঘির ঐতিহাসিক ‘রক্তদহ বিল’। ফকির মজনু শাহ এখান থেকেই সশস্ত্র অনুচরসহ প্রায় প্রতি বছর তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকারভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। সৈনিকদের রক্তে রঞ্জিত এ রক্তদহ বিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ বিলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পলাশী পরবর্তী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক রক্তাক্ত ইতিহাস।

জানা গেছে, এ বিলের আগে নাম ছিল ‘বিল ভোমরা’। ১৭৮৬ সালের একটি যুদ্ধে মজনু শাহ ও ইংরেজ সৈন্যদের প্রচুর লোক হতাহত হয়। বিল ভোমরার পানি রক্তের জোয়ারে লাল রঙ ধারণ করে। সেই রক্তের রঙেই বিলটির নাম হয়ে গেছে ‘রক্তদহ বিল’। রক্তদহ বিলে ফকির বাহিনীর একজন শীর্ষ যোদ্ধার কবর রয়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হত্যা করার পর ইংরেজরা এ বাংলার রাজ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসে। মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎশেঠ ও উমিচাঁদসহ কতিপয় চক্রে কর্মকাণ্ডে স্বাধীনতা হারিয়ে বাঙালি হতভম্ব হয়ে পড়েন। বছরের পর বছর ধরে ইংরেজদের অত্যাচার সহ্য করে যাওয়ায় যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। পলাশী পরবর্তী সময়ে যে কয়জন স্বাধীনতা জেতা মানুষ ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান তাদের মধ্যেই একজন ফকির মজনু শাহ।

ফকির মজনু শাহ তার অস্ত্রধারী সহস্র সহচর নিয়ে রক্তদহ বিল থেকেই তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকারভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। তার অভিযানের অঞ্চল ছিল প্রধানত বিহারের পানিয়া অঞ্চল এবং বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ময়মনসিংহ, কুচবিহার, জলপাইগুড়ি ও মালদা জেলা।

আরও পড়ুনঃ  তারল্য সংকটে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ছে না

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  রক্তদহ বিলে একসময় বোয়াল, চিতল, আইর, গজাল, পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তবে এখন বর্ষাকাল ছাড়া এই বিলে পানি থাকে না, একারণে শুস্ক মৌসুমে কৃষকেরা এই বিলে ধান চাষ করেন। তাছাড়া বিলের মাঝে যে মাজারটি রয়েছে স্থানীয়ভাবে সেটি ‘রক্তদহ দরগা’ নামে পরিচিত। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বড় বড় বন্যার মধ্যে দরগার চারদিক পানিতে ডুবলেও সেখানে কখনো পানি ওঠেনি। এ দরগাতে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ নৌকা ও যানবাহন যোগে আসেন মানত অথবা জিয়ারত করতে। ইতিহাসের স্বাক্ষী ঐতিহাসিক এই বিলটি রক্ষা করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

বিলপাড়ের বাসিন্দা আশফাকুল আসেকিন পান্থ বলেন, রক্তদহ বিলে বেইলি ব্রিজ, দরগা, সান্দিড়া খেয়াঘাট, বিল সংলগ্ন কদমা মৎস্য খামার ও সবুজ শ্যমল ঘেরা বিল পাড়ের প্রকৃতিক পরিবেশের কারনে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেয়ার জন্য দাবী জানাচ্ছি।

উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান জানান, বিলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র করা ও বিলে যাওয়ার কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে কাজ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন