শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শত দুর্ভোগেও ঈদের খুশি

  • সিন্ডিকেটে আপোষ করে ঘরে ফেরা

একটা সময় ছিলো গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য মন উতলা হতো। সুদূরের আহ্বানে ছুটে চলার প্রবল আগ্রহ তৈরি হতো। বাড়ির পথে যেতে যেতে মনে হতো এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো। তবে এখন আর তেমনটি কারোরই মনে হয় না। এখন বাড়ি যেতে সবারই মন চায়। কিন্তু সেই আবেগ আর থাকে না। চিরচেনা সেই পথ আর কাউকেই টানে না। টিকিট কালোবাজারি, যানজট, চাঁদাবাজি, সড়ক ও লঞ্চপথে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্খিত গন্তব্যের টিকিট পাওয়া যায় না। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বাস-ট্রেনের শিডিউলে ঘটে বিপর্যয়। অতিরিক্ত যাত্রী চাপে আতঙ্কে থাকে লঞ্চের যাত্রীরা। ফিরতেও পড়তে হয় একই বিড়ম্বনায়। এই পথ এখন বিড়ম্বনার, ভোগান্তির এবং আতঙ্কের। দেশের কোনো পথই ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। তবুও মানুষ উৎসবে ঘরে ফিরতে চায়। সীমাহীন ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই সবাইকে ছুটতে হয় বাড়ির পানে।

সদরঘাঁট ঘুরে দেখা গেছে, পন্টুনে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এক লঞ্চের পিছনে বেঁধে রাখা হয়েছে আরও দু থেকে তিনটি লঞ্চ। নির্ধারিত সময়ের দুয়েক ঘণ্টা আগে সবগুলো লঞ্চেই যাত্রী রয়েছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুন। প্রতিটি লঞ্চই ছেড়ে গেছে নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে কোন ধরণের বাধার মূখে পড়তে হয়নি কোন লঞ্চকে।

চাঁদপুরের বাসিন্দা আব্দুল খালেক। এক সময় ছিলেন সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম। স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বৌ এবং নাতির সঙ্গে থাকেন ঢাকার মিরপুরের নিজস্ব ফ্ল্যাটে। বর্তমানে তিনি একটি টেক্সটাইল মিলসের ডিজিএম’র দায়িত্ব পালন করছেন। ঈদের আনন্দে নাড়ির টানে ছুটে চলেছেন চাঁদপুরে। শুক্রবার সকালে তার সঙ্গে কথা হয় দৈনিক আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, লঞ্চে ভ্রমণ করতে বেশি পছন্দ করি। সাহরি করে নিজের গাড়ি রেখে উবারে করে লঞ্চঘাটে এসেছি। এসে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির কোন কেবিনেরই টিকিট পাইনি। বাধ্য হয়ে চেয়ারের টিকিট নিতে গিয়েছি গিয়ে দেখি তাও নেই। বাধ্য হয়ে ডেকে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও বসার জায়গাটুকুও নেই। অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি এমনিতেই অসুস্থ তারওপরে দাঁড়িয়ে থাকা এ এক অসহ্য যন্ত্রণার। পরে রায়পুরের একজন তার যায়গা ছেড়ে দিয়ে আমাকে বসতে দিয়েছে। কোনোভাবে রওয়ানা হলাম আরকি।

আরও পড়ুনঃ  ১২ ঘণ্টা পর পদ্মায় ভেসে উঠল ২ শিশুর মরদেহ!

চাঁদপুর ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি সিএনজি ও অটোরিকশায় যাত্রী প্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্গিুণেরও বেশি। একশো টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা করে।  ৭০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৪০ টাকা। লঞ্চঘাট থেকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। ঈদের আগে ২০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হলেও ঈদকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। চাঁদপুর থেকে রায়পুরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। এ সড়কে ঈদের আগে ভাড়া ছিলো ১০০ টাকা, তবে ঈদকে ঘিরে আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা।

ঘাট এলাকায় প্রশাসনের মনিটরিং বুথ থাকলেও তাদের সামনেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকরা। গাড়ির সিরিয়াল ঠিক করতেই পুলিশের যত ব্যস্ততা। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে তাদের কোনো তৎপরতাই লক্ষ্য করা যায়নি। তাইতো বাধ্য হয়েই অধিকাংশ যাত্রীরা পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হয়েছেন। সবার গন্তব্য বাস স্ট্যান্ডের দিকে। সেখান থেকে কম ভাড়ায় বাড়ি যেতে পারবেন বলে তাদের আশা। সেখানে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও ভোগান্তি যে একেবারে নেই তা কিন্তু না। সেখানেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ৩০  টাকার ভাড়া ৪০, ৪০ টাকার ভাড়া ৫০, ৫০ টাকার ভাড়া ৬০ এবং ৯০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এ বিষয়ে আনন্দ বাসের কন্ডাক্টর বলেন, আপনার ঈদ করতে বাসায় যাচ্ছেন আমাদের ঈদ বোনাস দিবেন না? ঈদ উপলক্ষে আমরা ১০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি। তবে কাউকে জোর করছি না।

নোমান নামে এক যাত্রী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, প্রতিটি ঈদেই এ ঘাটের সিএনজি চালকরা ভাড়া দ্বিগুণ করে দেয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এমন নৈরাজ্য চললেও তারা কোন ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সন্দেহজনক কারণে তারা সবসময়ই চুপ থাকেন। হয়তো এ সিন্ডিকেটে তারাও জড়িত। যাত্রীরা বাড়তি ভোগান্তি এড়াতে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  কুমিল্লায় ইদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলাদ ও মাহফিল

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, শুধু চাঁদপুরেই নয় দেশের প্রতিটি সড়কেই গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালিয়ে তা রোধ করতে পারছেন না। তবে এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু দুষ্কৃতিকারী জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন