শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাদামের নতুন দিগন্ত শরণখোলা

বাদামের নতুন দিগন্ত শরণখোলা

গত বছরের অতিবর্ষনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বীজতলা নষ্ট হয়েছিলো শরণখোলার অধিকাংশ চাষির। তখন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজতলা সংগ্রহ করে পুনরায় তা রোপন করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে। দূর দুরান্ত থেকে সংগ্রহ করা বীজ রোপন করে কেউ ভালো ফলন পায়। পাশ^বর্তী আমড়াগাছিয়া হাট থেকে বীজ কিনে জমিতে রোপন করলেও সেবারে ভালো ফলন পায়নি শরণখোলা উপজেলার মঠেরপাড় গ্রামের চাষি রফিকুল তালুকদার।

ক্ষতিগ্রস্ত রফিকুল তালুকদার ধানের ভালো ফলন না পেয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের শরনাপন্ন হয়ে তাদের পরামর্শ চায়। সেখানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তার ক্ষেতে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে তাকে চীনা বাদাম চাষের পরামর্শ দেন। বাদাম চাষের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরনায় প্রায় ৪০ শতক জমিতে প্রথমবারের মত বাদাম চাষ শুরু করে সে।

চাষি রফিকুল ইসলাম জানায়, ধান চাষে মার খেয়ে বাদাম চাষের কথা শুনে প্রথমে ভয় পেয়ে ছিলাম। তার পরও কৃষি বিভাগের ভাইদের কথায় আমি ও আমার প্রতিবেশী মোশারেফ হাওলাদার বাদাম চাষ শুরু করলাম। কারণ আমাদের এলাকায় এর আগে আর কেউ কোনদিন বাদাম চাষ করেনি।

কৃষি বিভাগ থেকে তাকে বিনামূল্যে বাদামের বীজ ও সার সরবারহ দেয়া হয়েছে। সবুজ বাদাম ক্ষেত দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ বাদাম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চাষি রফিকুল তালুকদার। চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হলেও তার  উৎপাদিত ৫০ মণ বাদাম বিক্রি হবে দুই লক্ষাধিক টাকায়। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে এমন অকল্পনীয় লাভের স্বপ্নে তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।

আরও পড়ুনঃ  অপেক্ষা করেন, আরও দেখবেন কী হয় : কৃষিমন্ত্রী

শরণখোলায় এ প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে বাদাম চাষে বাম্পার ফলন ও চাষি রফিকুলের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প এলাকায় অন্য চাষিদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। অনেক চাষি তার বাদাম চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। আগামীতে তাকে অনুসরণ করে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলায় ব্যাপক বাদাম চাষ হতে পারে।

কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চাষি রফিকুল কৃষি অফিসে আসলে আমি তার ক্ষেত দেখতে যাই। এ সময় মাটি পরীক্ষা করে বেলে, দো-আঁশ মাটি চিহ্নিত করে তাকে বাদাম চাষের পরামর্শ দেই। প্রথম দিকে সে অনীহা প্রকাশ করে। তাকে বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তার হাতে ২০ কেজি বাদামের বীজ ও সার তুলে দেই। এর কিছুদিন পরে সে ও তার প্রতিবেশী মোশারেফ হাওলাদার বাদামের চাষ শুরু করেন। তারা দু’জনেই বাদামের বাম্পার ফলন পাবেন। তবে তারা চাষে একটু বিলম্ব না করলে আরো ভালো ফলন পেতো বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, বাদাম চাষে তেমন সেচ ও পরিচর্যা লাগেনা। শরণখোলা উপজেলায় সেচ সংকট থাকায় এখানে বাদাম চাষ করা যেতে পারে। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাদাম চাষে অধিক লাভ করা সম্ভব।

তিনি আরো জানান, চলতি বছর এ উপজেলায় ৪ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ টি প্রদর্শনী ও ৩৫ জনকে বীজ সরবারহ করা হয়েছে। এবার প্রত্যেকেই বাদামের বাম্পার ফলন পাচ্ছেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন তিনি। বেলে, দো-আঁশ মাটি চিহ্নিত করে চাষীদের উৎসাহ দিতে পারলে এ উপজেলায় বাদাম চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বলে তার অভিমত।

সংবাদটি শেয়ার করুন