শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুগডালে চাঙ্গা অর্থনীতি

মুগডালে চাঙ্গা অর্থনীতি
  • ডাল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা

স্বল্প খরচ আর স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় অল্প পুঁজিতে মুগডাল চাষ করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মুগডাল চাষরা। গত এক দশকে উচ্চ ফলনশীল নানা জাতের বীজ বাজারে আসায় এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও নানা উদ্যোগের ফলে খেসারির পরিবর্তে ধীরে ধীরে মুগডাল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। উচ্চ ফলনশীল বীজে ফলন বেশি। উৎপাদন খরচ কম। চাহিদাও ব্যাপক। তাই উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মুগডালের চাষ হয়েছে। ক্ষেত ভর্তি মুগডালের বাম্পার ফলন দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে ঝিলিক। কৃষক-কৃষাণিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মুগডাল সংগ্রহে। তবে মধ্যস্বত্বভোগী আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি দপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় মুগডাল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ হাজার হেক্টর। তবে উপজেলার ৬ ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ করেছেন কৃষকরা। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ০.০৯ মেট্রিক টন ডাল উৎপাদনের আশা করছেন কর্মকর্তারা। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা যাবে।

আরও জানা যায়, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় ও স্বল্প খরচে যথাসময়ে চাষ করায় এবার মুগের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। তাতে প্রায় ২০ মণ ডাল পাওয়া যায়। প্রতি মণ ২২০০-৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যায়।

আরও পড়ুনঃ  থেমে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও

উপজেলার চরখালী, গোলখালী, কিসমত ছৈলাবুনিয়া, মজিদবাড়িয়া, কাকড়াবুনিয়া, গাজীপুরা, কাঠালতলীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে জুড়ে মুগ ডালের বাম্পার ফলন। সকাল-সন্ধ্যা ক্ষেত থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে ডাল সংগ্রহ করছে। অনেক ক্ষেত মালিক আবার শ্রমিক দিয়ে ৬ থেকে ৭ ভাগা চুক্তিতে ডাল তোলাচ্ছেন। এতে করে স্থানীয় শ্রমিকরাও ডাল তুলে লাভবান হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ফলে কৃষকদের বেশ উৎফুল্লভাবে ডাল সংগ্রহ ও ক্ষেতে কাজ করতে দেখা গেছে।

উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এক একর জমিতে মুগডাল চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মুগডাল চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। দামও ভালো পাওয়া যায়। একটু দেরীতে বিক্রি করলে মণে ২৫০০ থেকে ৩২০০ টাকা পাওয়া যায়।

কৃষক মোঃ সাহেব আলী হাওলাদার বলেন, সরকার থেকে  বীজ, সার ও কীটনাশক যা দেয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরও যদি বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হয় তবে কৃষকরা আরো বেশি জমিতে চাষ করতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আরাফাত হোসেন বলেন, মুগডাল একটি লাভজনক ফসল। শুকনা মৌসুমে এ অঞ্চলের জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ওই জমিতে কৃষকদের এ ডাল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মুগ ডাল চাষ করেছেন। তাছাড়া মুগডাল চাষের জমিতে পরবর্তীতে আমন চাষে ইউরিয়া সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। মুগডাল চাষের কারণে জমিতে প্রচুর জৈবসারের সৃষ্টি হয়। এর ফলে আমনের ফলন খুব ভালো হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন