ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আখের রসে স্বস্তি

আখের রসে স্বস্তি

মাদারীপুরের মানুষের প্রিয় আখের রস। এতে রোজার ক্লান্তি থেকে মুক্তি মেলে। ভ্যাপসা গরমে সারাদিনের রোজা রাখার ক্লান্তিকে মুক্তি দিতে আখের রসের জুড়ি নেই। এক চুমুকেই ক্লান্তি দূর হয়ে দেহে আসে সতেজতা। তাই রমজান আসলে ইফতারে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে যোগ হয় আখের রস। প্রচণ্ড তাপদাহে বিভিন্ন শরবত ও কোমল পানীয়র পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে চাষাবাদ ও নির্ভেজাল হওয়ায় মাদারীপুরে প্রতিটি ঘরে ইফতারে চাহিদা বেড়েছে আখের রসের। কারণ, অন্যান্য পানীয়র তুলনায় আখের রস শতভাগ নিরাপদ। তাই দুপুর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত সহজলভ্য এ পানীয় কিনে নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

চিকিৎসকের মতে, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আখের রস শরীরের জন্য নিরাপদ ও উপকারী। আখের রস পান করার সঙ্গে সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের মতো উপকারি উপাদান। এ রস পানে তৃষ্ণা কমে। ক্লান্তি দূর হয়।

জানা যায়, বহু বছর আগে থেকেই মাদারীপুরে মানুষের কাছে আখের রস অতি প্রিয়। রমজান মাস আসলে এর চাহিদা বেড়ে যায় আরো বেশি। চৈত্রের প্রখর রৌদের তাপে সারাদিন রোজার ক্লান্তি মেটাতে রোজাদাররা ইফতারে আখের রসকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

মাদারীপুর শহরে রমজান উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৩০টি জায়গায় বিক্রি হয় আখের রস। যা প্রতি লিটার ৭০ টাকা ও প্রতি গ্লাস ২০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে। দিনে প্রতিদিন একজন রস বিক্রেতা গড়ে ১২০ লিটার অবধি রস বিক্রি করে থাকে এ সময়ে।

আখের রস বিক্রেতারা জেলার রাজৈর উপজেলার কামালদি, কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা, শিবচর উপজেলার চরাঞ্চল থেকে আখ সংগ্রহ করে থাকে। তারা প্রতি মণ আখ, কৃষকদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা দরে ক্রয় করে থাকে। ক্রয় করার পরে তা গাড়ির মাধ্যমে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে জেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে।

সরেজমিনে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, তিনচাকার ভ্যানের উপর বসানো হয়েছে আখ থেকে রস বের করার যন্ত্র। যন্ত্রটিকে ঘুরাতে তার সঙ্গে সংযোজন করা হয়েছে ছোট একটি মটর। মটরটিকে চালাচ্ছে ৮ বোল্টেজের ৪টি ছোট ব্যাটারি। যন্ত্রটির একপাশ দিয়ে খোসা ছাড়ানো আখ ঢুকিয়ে দেওয়ার পরে যন্ত্রটির সাহায্যে চাপ প্রয়োগে বের করে আনছেন রস। মেশিনের একপ্রান্ত দিয়ে রস বের হয়ে পড়ছে মগে। পরে মগে জমা হওয়া রস ছাকনির সাহায্যে ছেকে নিচ্ছেন রস বিক্রেতা। রস বের করে আনার পরে, আখের রস কিনতে আসা ক্রেতাদের বোতল ঢেলে দিচ্ছেন রস। কেউবা আবার রসের মগ হাতে নিয়ে ইফতারের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।

আখের রস কিনতে আসা সোলাইমান শিকদার বলেন, বাজারের সব জিনিসেই ভেজাল। তবে আখের রসটা খাটি। তাছাড়া রোজা রাখার পরে আখের রসে দারুন তৃপ্তি দেয়। আমার পরিবারে ইফতারের প্রতিদিন অন্যান্য খাবারের সঙ্গে আখের রস থাকেই।

রস নিতে আসা রিকশাচালক খালেক কাজী বলেন, সারাদিন রোজা রাখছি, রিকশা চালাইয়া ভীষণ ক্লান্ত। এখন এখান থেকে এক গ্লাস রস কিনমু, আজান দিলে রস খেয়ে রোজা ভাঙমু। রস খাওয়ার পরে সারাদিনের ক্লান্তিই চলে যায়।

কলেজ রোড এলাকার রস বিক্রেতা ইউসুফ বেপারী বলেন,  ৪ বছর ধরে আমি এ এলাকায় রস বেচি। রমজান আসলে সারাবিকাল ক্রেতাদের অনেক চাপ থাকে। এর আগে প্রতি মণ আখ কিনা আনতাম ৫০০ টাকা দিয়া। রমজান মাস তাই দাম বেড়ে ৭০০ টাকা হইছে। তবুও আমরা রোজাদার মানুষের কথা চিন্তা করে আগের দামেই বেচি।

শহরের লেকপাড় এলাকার রস বিক্রেতা হাসান তালুকদার বলেন, প্রতিদিন আমার এখানে ৩ মণ আখের রস বেচাকেনা হয়, এক মণ আখের রস দুইহাজার টাকার মতো বেঁচতে পারি। রমজান আসলে রসের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রায় সবাই ইফতারের জন্য আখের রস বাসায় নিয়া যায়।’

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমদ খান বলেন, রোজা থাকার ফলে মানুষের দেহে ডিহাইড্রেশন হয়। এই অবস্থায় তাকে এমন খাবার খেতে হবে, যে খাবারে পানি এবং গ্লুকোজ দু’টোই থাকে। আখের রস তার মধ্যে অন্যতম, এটাতে সাথে সুগারও পাওয়া যায়। তবে একটা দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে পদ্ধতিতে আখের রস বের করে আনা হচ্ছে সেটাতে যথার্থভাবে হাইজিন মেইনটেইন করছে কি না। আর সাথে রস ঠাণ্ডা বানানোর জন্য বরফ ব্যবহার করে সেটাতে নিরাপদ পানি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে কি না। এই দু’টো বিষয় তারা যদি খেয়াল করে সরবরাহ করতে পারে, তাহলে রোজাদার মানুষেরা যে প্রয়োজনে আখের রস পান করে মেডিকেল সাইন্সের দিক থেকে এটাকে নিরাপদ বলা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন