শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনের পাশে বিশ্ব ব্যাংক

ইউক্রেনের পাশে বিশ্ব ব্যাংক
  •  ৭০ কোটি ডলার জরুরি তহবিল
  •  প্রতিবেশীরা দেবে ৩শ কোটি ডলার

ইরাক-সিরিয়া কিংবা ইয়েমেন-আফগান আগ্রাসনের পর বিশ্ব মানবিক বিপর্যয় দেখেছে বহুবার। বেওয়ারিশ লাশের মিছিল, অনাহার-অর্ধাহার আর অপুষ্টিতে কংকালসার শিশুর নির্বাক চাহনি কিংবা নীরবে মেনে নেওয়া অকাল মৃত্যু। দেখেছে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে মর্মান্তিক সলিল সমাধি। তবুও শক্তিমানরা ভাবে মানবিকতার কথা। আধুনিক সভ্যতায় আরো একটি মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। ইতোমধ্যে রুশ আগ্রাসনের মুখে ১৭ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় মধ্য ইউরোপে পাড়ি দিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা।

সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর পোল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছে ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী। বাড়তে থাকা এ সংখ্যা থামল দেওয়া আগের চেয়ে আরো জটিল হবে বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে শরণার্থীদের বেসামরিকের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ চলতে থাকলে ৫০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সামলাতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জোটটির শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেল।

এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে তা কাটিয়ে উঠতেই জরুরি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ইউক্রেন সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনা, বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানে সহায়তা করতে দেশটির জন্য ৭০ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, জাপান, ডেনমার্ক, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং আইসল্যান্ড এই প্রকল্পের অর্থ যোগান দিচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ইউক্রেন ও প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য তিনশো কোটি ডলারের একটি তহবিল ছাড় করার ব্যাপারে তারা কাজ করছে।

অবরুদ্ধ বন্দর শহর মারিউপোলে বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেখানে আটকে পড়া হাজার হাজার মানুষ পানি ও খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছে। শহর থেকে পালানো একটি পরিবারের সদস্যরা এএফপিকে জানিয়েছেন, শহরের সর্বত্র মৃতদেহ পড়ে আছে। কিয়েভের কাছের ছোট শহর হোসটোমেলের স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, রুটি এবং ওষুধ বিতরণের সময় গুলিতে শহরের মেয়র ইউরি প্রাইলিপকো মারা গেছেন। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হোসটোমেল বিমানঘাঁটি এই শহরের কাছেই অবস্থিত।

টানা ১৩ দিন ধরে ইউক্রেনে সংঘাত চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বোমার আঘাত আর ধ্বংসযজ্ঞ। দেশ দুটির সংঘাত আর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতিকে ভোগাবে বলে অনেকেই বলছেন। ইতোমধ্যে তেলের বাজার আগুন লেগেছে। অনেক দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার দ্রব্যে স্বাভাবিকতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্বর্ণের দামে রেকর্ড উত্থান দেখা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি করবে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি।

পশ্চিমা দেশগুলো যদি রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে ইউরোপে তাদের গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভক সোমবার বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তখন তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং ৩০ শতাংশ তেল পায় রাশিয়া থেকে। আর এই সরবরাহ বিঘ্নিত হলে এর সহজ কোনও বিকল্পও নেই। রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদক এবং অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎপাদক। আর এর জ্বালানি শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যেকোনও পদক্ষেপে অর্থনীতি মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবে।

আরও পড়ুনঃ  দুই ব্যাংকের ৯০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

সংবাদটি শেয়ার করুন