শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুগন্ধিতে ঘরবন্দী সময় উপভোগ

সুগন্ধিতে ঘরবন্দী সময় উপভোগ

করোনায় বেড়েছে পারফিউমের চাহিদা

  • দাম বেড়েছে তিনগুণ, খুরচায় আকাশচুম্বী

করোনাকালে ২০২০ সালের তুলনায় পরের বছর ২০২১ সালে সুগন্ধি পণ্যের যেমন চাহিদা বেড়েছে তেমনি খুচরা গড় মূল্যও বেড়েছে ১৫ শতাংশ হারে। যা এর আগের দুই বছরের তুলনায় তিনগুণের মতো। বিশেষ করে যার মধ্যে সুগন্ধি তেলের মাত্রা বেশি থাকে সেই ধরনের সুগন্ধির দাম বেড়েছে বেশি হারে।

সুগন্ধি কিছু সময়ের জন্য এক অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়। কঠিন বাস্তবতা থেকে দূরে, সৌন্দর্য্য ও আবেগপূর্ণ এক জগতে প্রবেশ করি আমরা। পারফিউম ব্যবহারে ক্রেতাদের ঝোঁকের প্রভাব পড়েছে বেচাকেনার ওপরও।

যুগ যুগ ধরেই বিলাসী দ্রব্য হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে আছে সুগন্ধি বা পারফিউম। আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রসাধনী সামগ্রির চাহিদা বেড়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে প্রিমিয়াম মানের পারফিউমের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। মহামারিকালে যেসব শিল্পে অভাবনীয় প্রসার ঘটেছে, তার মধ্যে সুগন্ধি শিল্প অন্যতম। চাহিদা আর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয়ভাবেই এ শিল্পের প্রসার ঘটেছে।

করোনাকালে ২০২০ সালের তুলনায় পরের বছর ২০২১ সালে সুগন্ধি পণ্যের যেমন চাহিদা বেড়েছে তেমনি খুচরা গড় মূল্যও বেড়েছে ১৫ শতাংশ হারে। যা এর আগের দুই বছরের তুলনায় তিনগুণের মতো। বিশেষ করে যার মধ্যে সুগন্ধি তেলের মাত্রা বেশি থাকে সেই ধরনের সুগন্ধির দাম বেড়েছে বেশি হারে।

একবার দিলেই দীর্ঘ সময় সুগন্ধ বজায় থাকে- এমন সুগন্ধির চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বাড়ার কারণেই গত দুই বছরে দামও আকাশ ছুয়েছে। মার্কেট রিসার্চ ফার্ম এনপিডি সূত্রমতে, ২০২০ সালে হোম সেন্ট বাদে শুধুমাত্র পারফিউম বিক্রির পরিমাণই বেড়েছে ৫২ ভাগ। ইউনিট হিসাবে ২০২১ সালে ১৭৫ ডলারের বেশি দামের পারফিউমগুলোর বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ।

আরও পড়ুনঃ  করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৮ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ

মূলত মহামারিকালের ঘরবন্দী সময়ে বিলাসদ্রব্যের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের একটু ভালো রাখার বা মন ভালো করার চেষ্টা করেছে। ভোক্তারা প্রিমিয়াম সুগন্ধি কেনার দিকে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যে কারণে প্রতিনয়তই দাম বাড়ছে।

এনপিডির কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পারফিউমের পাশাপাশি খাবার, আসবাবপত্র, জামাকাপড়, জুতা ও গাড়ির পেছনেও বেশ মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে চলেছেন। সে কারণে প্রসাধনী ও সেলফ-কেয়ারের ক্ষেত্রে যে ব্যয় বড়েছে তা বিস্ময়কর নয়। এপিডির এক কর্মকর্তার যুক্তি হলো, সুগন্ধি আমাদের কিছু সময়ের জন্য এক অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়। যেন কঠিন বাস্তবতা থেকে দূরে, সৌন্দর্য্য ও আবেগপূর্ণ এক জগতে প্রবেশ করি তখন আমরা। পারফিউম ব্যবহারে ক্রেতাদের ঝোঁকের প্রভাব পড়েছে তাদের বেচাকেনার ওপরও।

অন্যদিকে, সুগন্ধি ব্যবসায় সুবাতাসের সুযোগে নতুন কৌশলও অবলম্বন করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা ভালো মানের সুগন্ধির প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে কিছু কৌশল বেছে নিয়েছেন। এমন কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সামনের সারিতে রয়েছে পারফিউম সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস- সেন্টবার্ড। তারা স্যাম্পল বোতলের মাধ্যমে সুগন্ধি পরখ করার সুযোগ, উপহার কিংবা ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে কাস্টমাইজ করার সুবিধা দিচ্ছে।

এমনকি মাসিক ১৫ দশমিক ৯৫ ডলারের বিনিময়ে তারা তাদের সাড়ে চার লাখ সাবস্ক্রাইবারকে লাক্সারি সুগন্ধিগুলোর ছোট্ট ট্রায়াল সাইজ শিশি পাঠায়। এর মাধ্যমে ভোক্তারা বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি পরখ করে নিজেদের পছন্দমতো একটি ফুল-সাইজ বোতল কিনতে পারেন।

মহামারির প্রথম বছরেই সেন্টবার্ডের সাবক্রাইবার সংখ্যা এক লাফে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভলপমেন্ট, মার্চেনডাইজিং অ্যান্ড হোলসেল শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বেটিনা ও’নিল। তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছিলাম যে মহামারির কারণে দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্দী হয়ে থাকায় তারা এমন কিছু খুঁজছিল যা তাদের একটা সুন্দর অনুভূতি দিবে। তাই তারা নিজেদের জন্য সুগন্ধি ও ঘরের জন্য সুগন্ধি মোমবাতি কিনতে শুরু করে। প্রেস্টিজ পারফিউমে সাধারণত তেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং দামি উপাদান ব্যবহার করা হয়। তাই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  গ্রাম পর্যায়েও উন্নয়ন করতে হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

যেসব লাক্সারি পারফিউম অন্যগুলোর চাইতে একটু আলাদা এবং বেশি পরিশুদ্ধ, সেগুলোর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। কর্মকর্তারা আশাবাদী যে আগামী দিনগুলোতেও লাক্সারি পারফিউমের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা থাকবে। এর জন্য নতুন নতুন পারফিউম উদ্ভাবনকে তারা কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কেননা, ভোক্তারা সবসময়ই চায় তাদের কাছে সামান্য হলেও একটা বিলাসদ্রব্য থাকুক।

সেন্টবার্ড কর্মকর্তারা বলছেন, শ্যানেল নাম্বার ফাইভ পারফিউম তৈরির একটি মূল উপকরণ হচ্ছে বিরল জাতের একটি ফুল। আরেকটি জনপ্রিয় প্রেস্টিজ পারফিউম হলো ম্যাসন ফ্রান্সিস কুর্কজিয়ানের ব্যাকারা রুশ ৫৪০। এর ২ দশমিক ৪ আউন্সের একটি বোতলের দাম ৩০০ ডলারের ওপরে এবং ৬ দশমিক ৮ আউন্স বোতলের দাম ৬০০ ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে আছে জুঁই ফুল ও জাফরানের মতো দামি উপাদানের সংমিশ্রণ।

তবে এনপিডির উপদেষ্টা লারিসা জেনসে্নের সন্দেহ হচ্ছে যে, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যে হারে বেড়ে যাচ্ছে তাতে আগামীতে মানুষ সুগন্ধির পেছনে এতো টাকা খরচ করবে কিনা তা মাথায় রাখতেই হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন