যেকোনো আইন হতে হবে জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের নিরাপত্তার জন্য। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করে কোনো আইন প্রণয়ন করা কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান এবং সিজিএস বোর্ড মেম্বার ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।
শনিবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮: নাগরিক সমাজের চোখে” শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা আইনের বিরুদ্ধে কথা বলছি না। আইনে অনেক ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থাকে। আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে কোনো সমস্যা থাকে না। সমস্যা থাকে আইনের প্রয়োগে। এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভঙ্গির সংস্কার। তাহলে যেকোনো আইন-ই উপকারি হবে।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এই অপপ্রয়োগের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তিনি সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান এবং সিজিএস বোর্ড মেম্বার ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর এবং আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল।
সূচনা বক্তব্যে জিল্লুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ আমাদের সমাজে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এই আইনের ব্যবহার বাংলাদেশে একই সাথে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সংকটপূর্ণ চিত্রকে তুলে ধরছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে সমগ্র বিশ্বেই আমরা গণতন্ত্রের সংকোচন দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বের ৭০ শতাংশ ব্যক্তি একনায়কতন্ত্রের করায়ত্তে চলে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি প্রণয়ন করার সাথে সাথে আইনের ফাঁক-ফোকরও রেখে দেয়া হয়েছে, যাতে আইনের অপপ্রয়োগ চলতে পারে।
তিনি বলেন, আইনটির মাধ্যমে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই আইনের অপপ্রয়োগ করে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো নাগরিককে গ্রেফতারের ক্ষমতা লাভ করেছে।
ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নেই। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কিছু অস্পষ্টতা আছে। সরকারকে এই আইনের সংশোধন আনতে হবে। তিনি বলেন, এই আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, মানহানি এবং ধর্মীয় অনুভূতির মতো বিষয়গুলোকে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি এবং এই আইনের আওতায় করা মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তি হয় না। ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ ঘটানো খুব সহজ।
আনন্দবাজার/টি এস পি