করোনাভাইরাস মহামারী-উত্তর মুদ্রাস্ফীতি, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা এবং জাহাজীকরণ ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে অস্থির পণ্যবাজারকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বিশেষ করে শস্য, জ্বালানি এবং খামার খাতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি এমস তথ্য জানিয়েছে, খাদ্য ও কৃষি খাতের ওপর যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে ডাচ ব্যাংকিং ও আর্থিক কোম্পানি রাবোব্যাংকের বিশ্লেষকরা।
রাবোব্যাংকের বৈশ্বিক শস্য ও অয়েলসিডবিষয়ক কৌশলবিদ স্টিফেন নিকোলসন জানান, শস্য ও অয়েলসিডের দাম এরই মধ্যে বৃদ্ধির দিকে, আগামী দিনগুলোয় এটি আরও বাড়বে। এমন সময়ই যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো বিশ্ব। এ পরিস্থিতি জ্বালানি তেলের বাজারকেও সর্বোচ্চ অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে আশঙ্কা বেশি গম নিয়ে। কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেন সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক রফতানি পরিমাণে ২৯ শতাংশ গম সরবরাহ করে। পাঁচ বছরের ভিত্তি অনুসারে এমনটা দেখা গেছে। আমরা কোথা থেকে বাড়তি গমের সরবরাহ পাব। রাশিয়া ও ইউক্রেন খুব বেশি পরিমাণ মজুদ করে না। তারা হয়তো এগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত অথবা রফতানি করে।
স্টিফেন নিকোলসন বলেন, যদি আপনি বিশ্বের অন্য রফতানিকারকদের ওপর ভরসা করেন, তাহলে দেখবেন তারাও খুব বেশি পরিমাণ মজুদ করে না, যা দিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে রফতানি বন্ধ হলে সেটির ঘাটতি সামাল দেয়া যাবে। এ কারণে আন্তর্জাতিক গমের বাজার দ্রুতই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি শুধু পণ্যের দামকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে, যা এরই মধ্যে বাজারে চলমান। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা ভাবতে শুরু করবে তারা কোথায় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। এরই মধ্যে মার্কিন বহুজাতিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও পণ্য ব্যবসায়িক করপোরেশন আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড কোম্পানি (এডিএম) অঞ্চলটিতে (রুশ-ইউক্রেন অঞ্চল) তাদের বেশকিছু কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে। ক্রেতারা চিন্তা করতে শুরু করবে তারা কি তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলতে চায় কিনা।
রাশিয়া বৈশ্বিক সূর্যমুখী তেলের ৭৮ শতাংশ সরবরাহ করে। এশিয়ার দেশগুলো এসবের অধিকাংশের ক্রেতা। তাই বর্তমানে এসব ক্রেতাকে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।
নিকোলসন জানান, এটা একটি কঠিন সমস্যা। আমরা দেখতে পাচ্ছি বায়োডিজেল এবং নবায়নযোগ্য ডিজেলের চাহিদা বাড়ায় বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট প্রকট। এটি পাম অয়েলের ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে। এসময় পাম অয়েলের উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো চিত্রও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বেশ কয়েক বছর ধরে বর্তমান গাছগুলো বেশ পুরনো হয়ে গিয়েছে এবং নতুন কোনো রোপণের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।
কৃষকদের আর্থিক সক্ষমতা এ সময় আরেকটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পশ্চিমা দেখগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারনে অর্থ সংকটে ভুগতে পারেন চাষীরা।
পণ্যের দামের ব্যাপারে তুলনা করতে যেয়ে যুদ্ধটিকে তিনি একটি খড়ার সঙ্গে তুলনা করেন। যেখানে উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ার পর একটি পর্যায়ে স্থির হয় ও সেটি স্বল্প সরবরাহে সন্তুষ্ট থাকতে অভ্যস্ত হয়। তিনি জানান, দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। প্রশ্ন হলো তা কী পরিমাণ বাড়বে এবং কতদিন ধরে বাড়বে। যতদিন যুদ্ধ না থামছে ততদিন তা জানতে পারছি না।
আনন্দবাজার/টি এস পি