ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। সদর জেনারেল (ভিক্টোরীয়া) হাসপাতালে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার একমাত্র ডায়রিয়া হাসপাতালও এটি। হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। ডায়রিয়া রোগীর সেবায় নিয়োজিতরা জানিয়েছেন, প্রতিকূলতা সত্বেও সেবা নিতে আসা রোগীদে যথাসাধ্য সুস্থ করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন তারা।

তবে সাধারণ রোগীরা জানান, বেড পেতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘসময়। একজন সুস্থ হলেই মিলছে বেড। অস্বাস্থ্যকর পরিবশে আর নোংরা টয়লেট। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নারী এবং শিশুই বেশি। রোগীর তুলনায় বেড কম হওয়াতে বিপাকে পড়ছেন অনেক রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালটি এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত বলছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত বুধবার ১২৬ রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে প্রতি রাতের শেষের দিকে অন্তত ৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছে হাজারের অধিক রোগী। এবং পুরো ফ্রেরুয়ারি মাসে রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৩১১ জন।

হাসপাতালটির মেডিক্যাল কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা ইমন বলেন, হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ বেড়েছে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি পান না করা ও বেজাল খাবারের কারণ বলে মনে করি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কয়েক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণের মধ্যে যারা সুস্থ হচ্ছেন তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। যাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে তাদের ঢাকা উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া, হাজীগঞ্জ, ফতুল্লাসহ নগরীর পাইকপাড়া, জল্লারপাড়, বাবুরাইল, নিতাইগঞ্জ, নয়াবাজার এবং পাশের জেলা মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতলের মাত্র ৯ টি বেড, যেখানে গদাগাদি করে রোগীদের জায়গা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডের রোগীর জন্য চারটি ফ্যান থাকলেও তার দুইটি নষ্ট।

ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সুলমান মিয়া জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ভাত খাইছি, এরপর থেকে পায়খানা শুরু। সারারাত আর ঘুমাইতে পারি নাই। পরে হাসপাতালে আইয়া ভর্তি হইলাম। আইসা দেখি হাসপাতাল অনেক রোগী। আমি আগের চেয়ে এখন একটু ভালো আছি।

আরেকজন রোগী সামসুদ্দিন জানান, হঠাৎ করে গতকাল ৮ থেকে দশবার পায়খানায় গেছি। মনে হয় পানি খাইছিলাম সেখান থেকে হইছে। হাসপাতালে ভর্তি হইতে আইসা দেখি বেড খালি নাই। প্রথমে আরেক রোগীর লগে বসছিলাম। উনি সুস্থ হয়ে চলে যাওয়ার পর বেড পাইছি। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ভালা না। ফ্যান আছে কিন্তু চলে না, টয়লেটে বদনা নাই। এগুলো সব ঠিক করা দরকার।

এ ব্যাপারে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ শিউলি আক্তার জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীর চাপ অনেক বেশি। এ কারণে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। যখন এক সাথে অনেক রোগী আসে, তখন বাধ্য হয়ে একই বিছানায় একাধিক রোগীকে দিতে হয়। নারীদের বেডে নারীরা। শিশুদের সাথে শিশুরা। হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। কারণ ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র নয়টি বেড। আমরা তিন শিফটে ডিউটি করি। তারপরও রোগী আসছেই। গত কিছুদিন ধরে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন একশতাধিক রোগী আসে যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেড়গুণ।

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন, নানা পানি ও খাবারের কারণে এই ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণে নগরবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। যারা ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটি চতুর্থ তলার নির্মাণ কাজ শেষে সেখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ড স্থানান্তর করে বেড বাড়ানো হবে। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।

আনন্দবাজার/টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন