শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটকের ভিড়ে বাড়ছে রাজস্ব

পর্যটকের ভিড়ে বাড়ছে রাজস্ব

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভয় ও শিহরণ জাগানিয়া সুন্দরবন। কিংবা স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন বিশ^ ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ষাটগম্বুজ মসজিদ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ স্পটগুলোতে প্রতি বছর ভ্রমণ করেন হাজার হাজার পর্যটক। তাদের ভ্রমণকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে দিন-রাত কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদের নেতৃত্বে চলছে ট্যুরিস্ট পুলিশ খুলনা জোনের কার্যক্রম। টুঙ্গিপাড়া, বাগেরহাট, সুন্দরবন, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ায় রয়েছে পুলিশের এ বিশেষ ইউনিটের পাঁচটি জোন অফিস। আর একটি সাবজোন অফিস রয়েছে মেহেরপুরে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ তথ্য অনুযায়ী, এসব জোন অফিসের পর্যটন স্পটগুলোতে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৩ জন দেশি পর্যটক, ৫৩৪ জন বিদেশি পর্যটক ও ১ হাজার ২২ জন ভিআইপি/গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভ্রমণ করেছেন। যাদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করেছেন বাহিনীর সদস্যরা।

দেশের পর্যটন শিল্পে গতি আনার লক্ষে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ। পুলিশ বিভাগের বিশেষ এ ইউনিটটি নিয়মিত পুলিশেরই একটি অংশ। টুরিস্ট পুলিশের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় পর্যটকদের ঘিরে। করোনা মহামারির মধ্যে দেশের পর্যাটনখাত যখন ক্ষতিগ্রস্ত ঠিক তখনই টুরিষ্ট পুলিশের তৎপরতায় বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে দিনদিন পর্যাটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট ও সুন্দরবনজোন এর সদস্যরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করায় এ সফলতার বলে মনে করছেন পর্যটকসহ সংশ্লিষ্টরা। পর্যটকদের জন্য ২৪ ঘন্টা সেবা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ গ্রহণ করেছে নানা পদক্ষেপ। এর মধ্যে ট্যুর অপারেটর হোটেল-মোটেল ও পর্যটন এলাকা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে উন্নতসেবা প্রদানের লক্ষে নিয়মিত যোগাযোগ করাসহ দর্শনার্থী ও পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজ খবর নেয়া। এছাড়া জরুরি তথ্য কেন্দ্রসহ ফেসবুক পেইজ, এ্যাপস, হটলাইন নাম্বারের মাধ্যমে পর্যটকদের সেবা দিচ্ছে টুরিস্ট পুলিশ। টুরিস্ট পুলিশের এমন সেবায় খুশি দর্শনার্থীরা।

আরও পড়ুনঃ  নারীর মূল্যায়ন হোক মেধা ও মননে

গত সোমবার সকালে বাগেরহাট খানাজাহান আলী মাজারে দেখা যায় টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনেও টুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়। আগত দর্শনার্থীদের নানা পরামর্শ ও খোঁজ খবর নেওয়ার কাজে ব্যস্ত তারা।

যশোর থেকে আসা আলি কদর নামের এক দর্শনার্থী বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে প্রথমে খানজাহানের মাজারে নেমেছি। সেখান থেকে ষাটগম্বুজ আসার সময় টুরিস্ট পুলিশ ভাইরা আমাদের পথ চিনিয়ে দিয়েছেন। মোংলায় যাওয়ার জন্যও তারা আমাদের পথ দেখিয়েছেন। তাদের এ আন্তরিকতায় আমরা খুশি।

ঢাকা থেকে আসা ইসরাত জাহান ও আনিকা নামের দুই তরুনী বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রবেশের সময় গেটেই টুরিস্ট পুলিশের গাড়ি দেখলাম। ভিতরে নিজেদের ইচ্ছেমত ঘুরলাম। কেউ কোনো বিরক্ত করেনি। টুরিস্ট পুলিশ না থাকলে, হয়ত স্থানীয় বখাটেদের বিরক্তির শিকার হতে হত। টুরিস্ট পুলিশের কারণেই আমরা সুন্দর পরিবেশে বেড়াতে পারলাম। আবারও এখানে আসার ইচ্ছে রয়েছে আমাদের।

ষাটগম্বুজ এলাকার ভ্রাম্যমান ফটোগ্রাফার সোহেল বলেন, একটা সময় ছিল ষাটগম্বুজ এলাকায় দর্শনার্থীদের স্থানীয়রা হয়রানি করত। ইভটিজিংয়ের শিকারও হত মেয়েরা। কারণ গেটে আনসার সদস্য ছাড়া এখানে নিরাপত্তা বিধানের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা আসার পর থেকে এখানে কোনো ধরণের হয়রানি হয় না। দর্শনার্থীও বেড়েছে।

প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান যায়েদ বলেন, টুরিস্ট পুলিশের কাজ খুবই প্রশংসনীয়। তারা সব সময় দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখে। কেউ কখনও অসুস্থ্য হলে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন তারা। এছাড়া কোনো দর্শনার্থী যদি তার স্বজনদের হারিয়ে ফেলে তাদেরকে খোঁজার ক্ষেত্রেও টুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়ে টুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় এ এলাকার পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  পুঁজিবাজারে দুই কোম্পানির বিক্রেতা উধাও

অপরদিকে, মোংলা ও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। টুরিস্ট লঞ্চের পাসপারমিট চেক, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত, নির্ধারিত ভাড়া গ্রহণ, নদী পথে আকস্মিক বিপদ আপদে দর্শনার্থীদের পাশে থাকেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। মোংলা ও সুন্দরবন সংলগ্ন পযটন স্পটে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করে টুরিস্ট পুলিশের মোংলা জোন। এ জোনের অধীনে সুন্দরবনের করমজল মোংলাসহ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে।

দি ওয়েভ টুর অপারেটর ও হলিডেস শিপিং লাইনসের মালিক আবুল ফয়সাল এম সায়েম বলেন, টুরিস্ট পুলিশ আসার পর থেকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সাহস অনেক বেড়েছে। আমরা যেখানেই যাই না কেন, মনেকরি কোনো সমস্যা হলে টুরিস্ট পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করবে। সর্বোপরী টুরিস্ট পুলিশ আমাদেরকে অনেক সহযোগিতা করে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, বন বিভাগ ও টুরিস্ট পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা সুন্দরবনে নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করেছি। এছাড়া বিদেশী ও ভিআইপি দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগের পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

টুরিস্ট পুলিশ মোংলা জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা তিন শিফটে ২৪ ঘন্টাই দর্শনার্থীদের সেবায় নিয়োজিত থাকি। দর্শনার্থীদের সব ধরণের সুবিধা অসুবিধায় আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করি। কোন খারাপ লোক যাতে দর্শনার্থীদের সাথে কোন অন্যায় না করতে পারে এজন্য টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সব সময় সচেষ্ট থাকে।

টুরিস্ট পুলিশ খুলনা অঞ্চলের পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ বলেন, বিশ^ ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ এলাকার দর্শনার্থীদের সেবা প্রদানের জন্য আমাদের আলাদা দুটি জোন রয়েছে। আমাদের সদস্যরা সব সময় টুরিস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত থাকে। যার ফলে এই এলাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। টুরিস্ট পুলিশের আন্তরিকতায় পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছেন। এর ফলে যেমন দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। ভবিষৎতে এই ধারা অব্যহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন