ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বাংলাদেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর কারণে নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মতপ্রকাশে ভয় পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
সোমবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮: রাজনীতিবিদদের চোখে” শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।
সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সঞ্চালনায় ছিলেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, যখন একটি রাজনৈতিক দল বিরোধী দল হিসেবে থাকে, তখন তাদের বক্তব্য থাকে এক রকম। আবার সেই দলই ক্ষমতায় আসলে তাদের বক্তব্য হয়ে যায় পুরো ভিন্ন। সিজিএস ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ৮৩৫টি মামলার বিস্তারিত তথ্যাদি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)র চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
আহমেদ হোসেন বলেন, দেশে গণতন্ত্র আছে, চিন্তার স্বাধীনতা আছে, বাকস্বাধীনতা আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও আছে। পৃথিবীর সব দেশ-ই তাদের নিরাপত্তার উপর জোর দিয়ে থাকে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশের সমাজকে নিরাপদ করে, রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখে। তবে এই আইনের মধ্যে যদি কোনো অসামঞ্জস্যতা থেকে থাকে, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। জনগণের নিরাপত্তা অর্জনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, মানহানি না, এখন মানুষ মামলা করে ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে। যা অন্য ব্যক্তিকে হয়রানি করার একটি প্রক্রিয়া। যেসব কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেসব কারণের বিরুদ্ধেই আজকের এই আইন। যেসব প্রতিষ্ঠান জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত, সেসব প্রতিষ্ঠান- ই এখন জনগণের বিপক্ষে কাজ করে।
ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, সরকারের অন্যায়-অনিয়ম যাতে জনগণের সামনে না আসে এজন্য এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বিরোধী মতামতকে দমন করার জন্য এই প্রচেষ্টা। এই আইন আমাদের গণতন্ত্রের বিপরীত দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন দুই প্রকার। একটি দৃশ্যত উন্নয়ন এবং একটি অদৃশ্য উন্নয়ন। দৃশ্যত উন্নয়ন বলতে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নকেই বুঝি। অদৃশ্য উন্নয়ন বলতে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসনকে বুঝায়, যা আমরা চোখে দেখতে পাই না অনুভব করতে পারি।
আনন্দবাজার/টি এস পি