শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্দায় সব সূচকে পতন

মন্দায় সব সূচকে পতন

সাপ্তাহিক পুঁজিবাজার—

  • মূলধন কমেছে ২০৩৫৬ কোটি টাকা
  • ডিএসইতে ১০৫৭৩ কোটি টাকা
  • সিএসইতে ৯৭৮২ কোটি

লেনদেন–

ডিএসইতে ৩৯৮৭ কোটি টাকা, সিএসইতে ১২৩ কোটি

ডিএসইএক্স কমেছে ১৫১ পয়েন্ট, সিএএসপিআই ৪৬৮ পয়েন্ট

বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজারের লেনদেন মন্দায় কেটেছে। তাল মিলিয়ে সব ধরনের সূচকের পতন হয়েছে। কমেছে ৭৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরও। সপ্তাহটিতে পুঁজিবাজারের মূলধন কমেছে ২০ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসই ও সিএসইর সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে আগে বা ১৭ ফেব্রুয়ারি মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে সিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ১০ ফেব্রুয়ারি মূলধন ছিল ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৪২ কোটি ৩ লাখ টাকা।

গেল সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২০ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৫৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৯ হাজার ৭৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১২ হাজার ৮৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৮২৩ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরও আগের সপ্তাহে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছিল ৮ হাজার ৫২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে মূলধন বেড়েছিল ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৩ হাজার ৯৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

চলতি বছরের প্রথম তিন সপ্তাহ (১৫ কার্যদিবস) কারণবিহীন বেড়ে উঠেছিল পুঁজিবাজার মূলধন। হঠাৎ করেই এরপর দুই সপ্তাহ (১০ কার্যদিবস) মূলধন কমতে দেখা গেছে। তাল মিলিয়ে বছর শুরুর তিন সপ্তাহে লেনদেন উত্থানে চমক থাকলেও এরপর দুই সপ্তাহে লেনদেন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। এরও পরের এক সপ্তাহ মূলধন বৃত্ত বেড়েছিল। কিন্তু সেখান পরের বা গেল দুই সপ্তাহে মূলধন কমেছে।

আরও পড়ুনঃ  নগরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছাতে মেগা প্রকল্প

পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়া-কমা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি যেমন ভালো লক্ষ্মণ না, তেমনি কমাও নয়। সব ক্ষেত্রেই বাড়া-কমার একটা সীমা থাকে। যখন সেই সীমা অতিক্রম করে, সেই ক্ষেত্রে সবার মনে অনেকগুলোর প্রশ্ন তৈরি হয়। এসব প্রশ্নের পরিষ্কার ও যৌক্তিক জবাব জানা থাকলে, সেটা অন্য কথা। না জানা থাকলে সেই ক্ষেত্রে বিজ্ঞরা বিযয়টি ভালো চোখে দেখে না।

চলতি বছরের শুরুর প্রথম ১৫ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন বেড়েছিল ৪৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। মূলধনের এ ধরনের বৃদ্ধিকে বাঁকা চোখে দেখেছিলেন অনেকেই। এই বৃদ্ধির কারণে নানান ধরনের প্রশ্ন জন্ম দিয়েছিলো। অনেকেই মনে করেছিলেন পুঁজিবাজারে থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে খারাপ চক্রদের নতুন কৌশল।

এসব কারণে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত ছিলেন। বিরত থাকার পরের দুই সপ্তাহ বা ১০ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন কমেছিল ৬ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর পরের এক সপ্তাহ মূলধন ৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বেড়েছিল । কিন্তু সেখান পরের বা গেল দুই সপ্তাহে মূলধন কমেছে ৩৩ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। গেল দুই সপ্তাহ পুঁজিবাজার মূলধন কমার মধ্যে ছিল, এধরনের কমার স্বাভাবিক নিয়মে হয়নি বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে সূচকসহ লেনদেন উত্থান ক্ষেত্রে চমক। কেন দেখাচ্ছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। হতে পারে গত বছরের শেষদিকের মন্দা পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে তারাই নতুন বছরে পুঁজিবাজার উত্থান ঝলক ছিল।

তাই বছরের শুরুর প্রথম তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। তবে উত্থানের একটা লাগাম থাকে। সেটা অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হাত থেকে রক্ষা করে। অস্বাভাবিক উত্থানের পর তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজারে উত্থানের পথ কিছুটা বাধা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে গত দুই সপ্তাহের পতনে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের। সবমিলিয়ে এরপরও পুঁজিবাজারে অতি দামে শেয়ার ক্রয় করা থেকে বিরত সহ লোকসানে শেয়ার বিক্রয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচনী নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে পৌনে ২ লাখ পুলিশ

পুঁজিবাজার ওভার-ভ্যালুড হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট অনেকের এমন মন্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ডিএসইর পুঁজিবাজার মুলধন ৩ লাখ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকায় ওপরে উন্নীত হয়েছে। এতে বাজারের মূলধন আকার বড় হয়েছে। বাজার আরো বড় হবার জরুরি। কিন্তু অনেকে এই বাজারকে ওভার-ভ্যালুড বলে মনে করছেন, যা ঠিক নয়।

এদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারের সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৩৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৫৮ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৭৫ দশমিক ৭২ পয়েন্টে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৬৮ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯৯১ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই ৫০ সূচক ৩৭ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট, সিএসই৩০ সূচক ২৮৯ দশমিক ৭০ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ২৮৪ দশমিক ২০ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৩০ দশামক ৮২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৭৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ১৪৭ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৯৯৯ দশমিক ২৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৪৮ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে।

গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৫ হাজার ৯৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অপরদিক গেল সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ২১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে কমেছে ৭৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর। বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।

আরও পড়ুনঃ  তেলের দাম বাধ্য হয়েই বাড়িয়েছে সরকার: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

সপ্তাহটিতে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৩টির বা ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, দর কমেছে ২৮৭টির বা ৭৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির কোম্পানির। লেদনের হয়নি পাঁচ কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৫টির বা ২২ দশমিক ১২ শতাংশ, দর কমেছে ২৫১টির বা ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির কোম্পানির।

গেল সপ্তাহে ডিএসইতে এ ক্যাটাগরির ২ হাজার ৯৫১ কোটি ৮৮ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় বি ক্যাটাগরির ৭০৩ কোটি ৬৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, এন ক্যাটাগরির ১১২ কোটি ৯৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা ও জেড ক্যাটাগরির ৫৮ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সপ্তাহে সিএসইতে এ ক্যাটাগরির ৭৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯৩ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় বি ক্যাটাগরির ২৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৩ টাকা, এন ক্যাটাগরির ১৭ কোটি ১৮ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৯ টাকা ও জেড ক্যাটাগরির ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৪১৭ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন