শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তুলায় সুদিন ফিরছে চরে

গাজীপুরের কাপাসিয়া তুলায় সুদিন ফিরছে চরে
  • ধান-কলার চেয়ে তুলা চাষে লাভ বেশি
  • প্রতিমণে ৯শ’ দাম বেড়েছে

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার নামটি এসেছে মূলত কার্পাস নামক তুলা থেকে। প্রাচীন রাজা-বাদশাদের আমলের বিখ্যাত কাপড় মসলিন তৈরীর মূল উপাদান তুলার উৎপাদনটা শুরু হয়েছিলো মূলত কাপাসিয়ায়। তবে সময়ের পরিক্রমায় কাপাসিয়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তুলার চাষ। ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় তৈরীর মূল উপাদান ছিলো কার্পাস তুলা। শুরুতে এ অঞ্চলে তুলার চাষ কিছুটা ধীরে হলেও বর্তমানে তুলা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

জেলার কাপাসিয়া উপজেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত বৃহত্তর খিরাটী গ্রাম। আর এ গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের অববাহিকার পশ্চিম পাড়ের বিস্তীর্ণ চরে ব্যাপকহারে তুলার চাষ হয়েছে। এতে তুলা চাষিদের মনে আবারও আশার আলো সঞ্চার হয়েছে। এক সময়ের অনাবাদি ও পতিত জমিতে তুলা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। দিন দিন এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তুলা। কৃষকদের এখন ব্যস্ত সময় কাটছে ক্ষেত থেকে তুলা সংগ্রহের কাজে। চলতি বছর এ উপজেলায় প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তুলার ফলনও ভালো হয়েছে। পাশাপশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় লাভের স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এ বছর তুলার দাম মণ প্রতি ৯শ’ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৬শ’ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের চর খিরাটী গ্রামের তুলা চাষি কফিল উদ্দিন আনন্দবাজারকে বলেন, মনোহরদী উপজেলা কৃষি অফিস আমাদরেকে তুলা চাষে উদ্ধুদ্ধ করে। কারণ তুলা চাষে খরচ কম এবং লাভের পরিমান বেশি। মনোহরদী উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সার, বীজ, কীটনাশকসহ যাবতীয় ঋণ সহায়তা নিয়ে গত ৩ বছর ধরে তুলার চাষ করে আসছি। গত দুই বছর এক থেকে দেড় বিঘা জমিতে তুলা চাষ করলে লাভ বেশি পাওয়ায় চলতি বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। এবার তুলা গাছে বল/গুটির ফলন ভালো এবং তুলার দাম ভালো থাকায় অন্য বছরের তুলনায় তিনিসহ তুলা চাষিরা লাভের স্বপ্ন বুনছেন। তুলা চাষি আব্দুল্লাহ আকন্দ বলেন, প্রমবারের মত একবিঘা জমিতে তুলার চাষ করেছি। তুলা চাষে খরচ সর্ম্পকে তিনি জানান, ৮ মাসের ব্যবধানে ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষের জন্য নূন্যতম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে তুলা চাষের জন্য সার, বীজ, কীটনাশকসহ যাবতীয় খরচ কৃষি অফিস বহন করে। আমাদের শুধুমাত্র পরিশ্রম টুকুই যায়। এজন্যই মূলত তুলা চাষে লাভের পরিমাণটা অনেক বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যতিত অন্যকোনো ভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা একবারেই নাই। এছাড়া ধান এবং কলা চাষের চেয়ে তুলা চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। তবে ১ বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয় প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা এবং কলা চাষে খরচের পরিমাণ আরো বেশি। কারণ কলা দীর্ঘ মেয়াদী ফসল। সেই তুলনায় তুলা চাষ একেবারেই ভিন্ন।

আরও পড়ুনঃ  ড্রাগনের চাহিদা বেশি বাড়ছে বাণিজ্যিক চাষ

মনোহরদী উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তুলা চাষের অনুকূল আবহাওয়া থাকায় তুলার ফলন ভালো হয়েছে। তুলা চাষিরা যেন উৎপাদিত তুলার ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য তুলার দাম বাড়িয়েছে সরকার। মণ প্রতি মূল্য বৃদ্ধি করেছে ৯শ’ টাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ হাজার ৬শ’ টাকা। গত বছর ছিলো ২ হাজার ৭শ’ টাকা। চলতি বছর কাপাসিয়ায় প্রায় পৌনে চার হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৪ মণ তুলা ঘরে তোলা যাবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রান্তিক তুলা চাষিদের কাছ থেকে উৎপাদিত তুলা ক্রয় করা হবে। চলতি বছর কৃষকদের উৎপাদিত তুলার বিক্রিয় মূল্য হবে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা মতো।

তিনি আরও জানান, চলতি বছরই কাপাসিয়ায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ইউনিট অফিস হবে। যেখান থেকে তুলা চাষের সম্প্রসারিত এলাকা দেখভাল করা হবে। আশা করছি আগামী বছর ১শ’ বিঘার উপরে চলে আসবে তুলা চাষের সম্প্রসারিত এলাকা।

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুমন কুমার বশাক জানান, যেহেতু আমাদের এখানে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কোনো অফিস নেই, তাই আমরা মনোহরদী উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অফিসারদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছি। আমাদের এখান থেকে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সব সময়ই তাদের দেখভাল করে থাকেন। শুধুমাত্র তুলাই নয়, অন্যান্য কৃষিজ ফসলের দেখভাল ও চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাপাসিয়ায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের একটা ইউনিট অফিস স্থাপনের বিষয়ে ইতোমধ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ডিজি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন