এক বছরের ব্যবধানে পণ্যমূল্য বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ এমন তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা কনজ্যুমার ফোরাম-এর এক গবেষণায়। এদিকে ক্যাব সভাপতি বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু তার চেয়েও বেশি গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে স্থানীয় বাজার। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে প্রতিনিয়তই বাড়াচ্ছে পণ্যের দাম।
সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যে হারে ব্যয় বাড়ছে, সেই হারে বাড়ছে না আয়। ফলে বিপদে পড়েছে নিম্নবিত্ত শ্রেণি। মধ্যবিত্ত শ্রেণিও চাপের মুখে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু তার চেয়েও বেশি গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে স্থানীয় বাজার। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে প্রতিনিয়তই বাড়াচ্ছে দাম।
কনজ্যুমার ফোরামের গবেষণা
২০২১ সাল জুড়ে বাজার দরের গতিবিধি বিশ্লেষণ করেছে কনজ্যুমার ফোরাম। সংস্থাটি বলছে, গত এক বছরে গড়ে পণ্যমূল্য বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৬ ভাগ।
হিসেব বলছে, এই এক বছরে সব রকম চালের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল ২৮০০ টাকা। চলতি জানুয়ারিতে সেটা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হয়েছে ৩ হাজার ৫০ টাকা।
আটা-ময়দা-সুজির দাম বেড়েছে ২০ ভাগের বেশি। গত বছরের জানুয়ারিতে ২ কেজি প্যাকেট আটার দাম ছিল ৭৬ টাকা। চলতি জানুয়ারিতে একই পরিমাণ আটা কিনতে ভোক্তাকে গুণতে হয়েছে ৯৪ টাকা।
প্রায় ১৪ ভাগ বেড়েছে ডালের দাম। গত জানুয়ারিতে এক কেজি দেশি মসুর ডাল ছিল ১২৫ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এক কেজি মসুর ডালে ভোক্তার ব্যয় ১৪৫ টাকা।
২০ ভাগের বেশি বেড়েছে চিনির দাম। এক কেজি চিনি কিনতে ভোক্তাকে ৭২ টাকার জায়গায় এখন ৮৫ টাকা গুণতে হচ্ছে।
ভোজ্যতেলের দাম প্রায় বেড়েছে ১৬ ভাগ। গত জানুয়ারিতে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ছিল ৬৫০ টাকা। চলতি বছর জানুয়ারিতে সেটা বেড়ে ৭৬০ টাকা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে তা আরেকদফা বাড়িয়ে হয়েছে ৭৯৫ টাকা।
এ ছাড়া সরিষার তেলের দাম এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১০ শতাংশ ও নারকেল তেলের দাম ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে। সব ধরণের গুড়া মসলার দাম বেড়েছে ১১ ভাগের বেশি।
সাবান, ডিটারজেন্ট ও হ্যান্ডওয়াশের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। থালা-বাসন পরিষ্কার করার উপকরণ ভিমবারের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। হারপিক ও লাইজলের দর বেড়েছে ২ দশমিক ৬ ভাগ।
এ ছাড়া গুড়া দুধ ৯ শতাংশ, নুডলস ও স্যুপ ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, ঘি সাড়ে ৮ শতাংশ, টুথপেস্ট ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, টিস্যু বা সমজাতীয় পণ্যের দর ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতের সুযোগ নেই। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুটে ক্রেতার উপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে বলে মনে করে তিনি বলেন, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করায় যে সংকট ও অব্যবস্থাপনা, তার আশু সমাধান জরুরি।
সাধারণ মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে নিত্যপণ্যের মূল্য ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জোর দাবি করে তিনি বলেন, আর কিছুদিন পরই রোজা শুরু। এ সময় যেন কোনো পণ্যের অযাচিত মূল্য না বাড়ে, সে বিষয়ে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আনন্দবাজার/এম.আর