শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুলচাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

কুলচাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

নওগাঁর বদলগাছীতে অস্ট্রেলিয়ান ‘বল সুন্দরী’ ও কাশ্মীরি আপেল (বরই) কুলচাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে কৃষক আফতাব হোসেন পিন্টুর। বরই চাষে পিন্টুর চোখে মুখে এখন লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন হাতছানি দিচ্ছে। তিনি উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের মাঝুড়া গ্রামের আবুল হোসেনেরর ছেলে। ইউটিউবে বরই চাষের ভিডিও দেখে উৎসাহিত বরই বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। ঝিনাইদহে বেড়াতে গিয়ে পরিচিত একজনের বরই বাগানে বরই দেখে তিনি মুগ্ধ হোন। এর পর তিনি বাগান মালিকের কাছ থেকে বরই চাষে পরামর্শ নেন।

বাড়িতে এসে পিন্টু তার ছোট ভাই রায়হানের সঙ্গে আলোচনা করে এবং কৃষি কাজের জমানো কিছু টাকায় প্রতিবেশীর ৮ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেয়। পরে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন বরই বাগান কার্যক্রম।
পিন্টু ঝিনাইদহ ও ফরিদপুর থেকে ১ হাজার ৯শ’ টি চারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আনেন। এরপর মিঠাপুর ইউপির ইসমাইলপুর এলাকা সংলগ্ন মাঝুড়াতে ১ হাজার ৯শ’ বরই চারা ৮ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। আট মাসের মাথায় সবকটি গাছেই কুল ধরে। বরই চাষে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। বরই (কুল) বাগানে এখন গাছে ঝুলছে বরই। ১৫শ’ মণ বরই (কুল) তার বাগানে মজুদ আছে বলে জানান তিনি। ১৮ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলে চাষি আশাপোষণ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আফতাব হোসেন পিন্টুর বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় কুল ধরেছে। ফলের ভারে গাছসহ ডালগুলো নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি গাছ। পাখি ও চোরের হাত থেকে বরই রক্ষায় পুরো বাগান চারপাশে জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য বাগানের এক পাশে উঁচু করে মাচা তৈরী করে রেখেছেন। রাতে বাগান মালিক আফতাব হোসেন পিন্টু টোলে বসে বাগানটি পাহারা দেন। এ ধরনের বরই চাষ করে পিন্টু এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  বন্যাকবলিত এলাকার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৮ নির্দেশনা

আফতাব হোসেন পিন্টু বলেন, শখের বসেই কুল চাষের জন্য ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী আপেল বরই, থাই, সিডলেচ বরই চাষ শুরু করি। আমরা ভাবিনি এতো ফলন হবে। আগামীতে কষ্ট করে হলেও আরো বড়ভাবে চাষের চেষ্টা করবো। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমার উপকার হবে এবং সহজেই বড় পরিসরে (কুল) বরই চাষ করতে পারবো। তিনি আরও জানান শুরুতে ১৫শ’ টাকা মণে বরই বিক্রি করছি। পনের দিনের মধ্য পুরো দমে বরই বিক্রি শুরু হবে। বাজারে যদি ভালো দাম পাই তাহলে এবার ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

স্থানীয় প্রতিবেশী বাপ্পি, ইউসুফ, মাহফুজ জানান, পিন্টু বরই বাগান করে চমক দেখিয়েছেন এলাকাবাসীকে। তার বরই বাগানে প্রচুর বরই ধরেছে, ফলনও ভালো হয়েছে। আমরা তার এ বিভিন্ন জাতের বরই চাষ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আগামী বছর আমরা ও তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজেদের জমিতে বরই চাষ শুরু করবো। পিন্টু বরই বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন প্রতিদিন বিকেলে ভিড় জমায়।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, আমরা তাকে প্রতিনিয়ত বরই চাষের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। বরই চাষি পিন্টুকে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন