বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে হতাশ ফুল ব্যবসায়ীরা

গাজীপুরে হতাশ ফুল ব্যবসায়ীরা

বসন্ত-ভালোবাসা দিবস

রাস্তার ধারে ছোট ছোট ফুলের দোকানে সাজিয়ে রাখা ফুলে একটু পর পর পানি স্প্রে করে সেগুলোকে তাজা ও সতেজ রাখছেন গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর-রাজবাড়ি রোডের অর্কিড ফ্লাওয়ার হাউজের মালিক ফুল ব্যবসায়ী রুবেল চৌধুরী। তার দোকানের সকল কর্মচারিসহ সবার লক্ষ্য একটাই, পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের এ দিনে ক্রেতাদের হাতে তাজা ফুল তুলে দেওয়া। পাশাপাশি নিজের দোকানের বিক্রিও বাড়ানো। অন্যদিকে কিছু ফুলের তোড়া আগাম তৈরি করে সাজিয়ে রেখেছেন ভিড়ের সময়টাতে দ্রুত বিক্রির জন্য। তার দোকানে রয়েছে নানা জাতের বাহারি সব ফুল। পহেলা ফাল্গুন ও বিশ^ ভালোবাসা দিবসকে নিয়ে করেছিলেন ভালো একটা আশা। ভেবেছিলেন করোনার এ সময়ে দিবসকে ঘিরে বিক্রিও করবেন ভালো।

তবে মনের মধ্যে পোষণ করা আশায় পড়লো গুড়েবালি। গতকাল সকাল থেকে যেমন ক্রেতার আশা করেছিলেন তেমন ক্রেতার দেখা মেলেনি! ফুলের এ ভরা মৌসুমেও তার মনকে রাঙাতে পারেনি রঙিন ফুল, কারণ দুপুর পেরোলেও বিক্রি হয়নি অধিকাংশ ফুল। গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের মধ্যে বসে থেকেও মনে সুখ নেই গাজীপুরের ফুল ব্যবসায়ীদের।

ফুল ব্যবসায়ী রুবেল চৌধুরী আনন্দবাজারকে জানান, এ দিনে ফুলের মূল ক্রেতা স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু করোনা মহামারির এ সময়ে বন্ধ রয়েছে কলেজসহ সকল প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে করোনার বিধি-নিষেধ থাকায় সাধারণ ক্রেতাও একেবারেই কম। তাই আশানুরুপ ফুলের ক্রেতা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি ও তার মতো শহরের অনেক ব্যবসায়ী। মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। আর এতে করে বিয়েসহ সামাজিক অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজনও অনেকটা কমে গেছে। তবে এই দিনকে ঘিরে তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি ফুল কিনেন। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রায় সবাই বাড়িতে অবস্থান করছেন। 

আরও পড়ুনঃ  উত্তরা থেকে ৪ জঙ্গি গ্রেফতার

ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে জাতীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। নতুন বছরের শুরুর মধ্য দিয়ে ভালোভাবে ফুলের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বসন্তবরণ ও বিশ^ ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে এবার প্রায় ৮ লাখ টাকার ফুল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিক্রি কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ হবেই না উল্টো এই আমদানি করা ফুল নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে পারেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে সংকটময় এই পরিস্থিতিতে দোকানের কর্মচারী, দোকান ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ মেটাতে হিমশিম খাবেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন জায়গা মিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় শতাধিক ফুলের দোকান রয়েছে। এসব ফুলের দোকানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রঙের গোলাপ,জুঁই, চামেলি,জারবেরা,রজনীগন্ধা, কালার গ্লাডিওলাস,গাঁধাসহ নানা রং ও বর্ণের ফুল। গত সোমবার ভোর থেকেই ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল সাজানো ও বিক্রিতে। তবে সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরোলেও অধিকাংশ ফুলই রয়ে গেছে অবিক্রিত। করোনা পরিস্থিতির আগে যে বিক্রি হয়েছিলো অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের বিক্রির চেয়ে এখনকার বিক্রির অবস্থা তুলনামূলক কমেগেছে। বলা চলে তিন ভাগের একভাগও বিক্রি নেই।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ফুলের দাম অনেক বেশি চড়া। ব্যবসায়ীরা ফুলের দাম রাখছেন ইচ্ছেমতো। রাত ও সকালের বাজারের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সাধারণ সময়ে প্রতি পিস গোলাপের বিক্রি ২০-৩০ টাকা হলেও আজ সকালে থেকে ৫০-৬০ টাকা দরে হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। দাম গত বছরের দ্বিগুন। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বাসন্তি রঙের গাঁদার চেইন আগে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  বিরতিহীন যাত্রায় ছিনতাই

ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি ছোট আকৃতির গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় আর একটু বড় আকৃতির গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। রজনীগন্ধার স্টিক ২০-২৫ টাকা, কালার গ্লাডিওলাস ৩০-৪০ টাকা, ফুলের তোড়া সর্বনিম্ম ৩শ থেকে ১ হাজার টাকা। ফুলের মধ্যে এবার রজনীগন্ধা ও গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তরুনীদের পছন্দের মধ্যে রয়েছে জারবেরা ও কালার গোলাপ। তবে ভালোবাসা দিবসের জন্য গোলাপের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে টিউলিপ ফ্লাওয়ার হাউজের ফুল ব্যবসায়ী জীবন সরকার জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হযনি বললেই চলে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় তারা ভেবেছিলেন, বসন্ত উৎসব ও বিশ^ ভালোবাসা দিবসে ব্যাপক হারে ফুল বিক্রি করে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিবে। কিন্তু এবারও তা হলোনা।

সংবাদটি শেয়ার করুন