রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার সপ্তাহে আইপিও অনুমোদন

চার সপ্তাহে আইপিও অনুমোদন
  • কাগজপত্র ঠিক থাকলে বিলম্ব নয়
  • বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবার রাস্তা বন্ধ: বিএসইসি চেয়ারম্যান 

কেউ কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাণিজ্য করে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবার রাস্তা বন্ধ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। একই সাথে বলেন, কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে ভালো কোম্পানির আইপিও সর্বোচ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন পাবে।

গতকাল রবিবার রাজধানীর ফারস হোটেলে “শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের উপায়” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে অনলাইন নিউজপোর্টাল বিজনেসআওয়ার২৪.কম। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা আকতার হোসেন সান্নামাত এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সম্পাদক ও প্রকাশক আমিরুল ইসলাম নয়ন।

আইপিও বাণিজ্য, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য এগুলো বহুত হয়েছে দেশে জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখন আমরা এটাকে মোটামুটি একটা অবস্থানে নিয়ে আসছি। কেউ আইপিও বাণিজ্য করে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবে এটা মোটামুটি আমরা বন্ধ করতে পেরেছি। সেই সঙ্গে কোনো অডিটর এখন সাহস পাবে না ভুল রিপোর্ট দিয়ে আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে টাকা নিয়ে চলে যাবে। যেসব চাটার্ড একাউন্টেন্ট এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

শিগগির পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও আসবে জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, তিনটা ভালো কোম্পানি আইপিওতে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নেক্সট কোয়াটার থেকেই আপনারা দেখতে শুরু করবেন যাদের আপনারা চাচ্ছে, তারা আস্তে আস্তে আসতে শুরু করছে। ভালো সুস্থ একটা পরিবেশ যখন পাওয়া যাবে, তখন অন্যরা উৎসাহিত হবে। চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিকমত জমা দিলে আমরা ভালো কোম্পানির আইপিও সাতদিন থেকে সর্বোচ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দিয়ে দেব। অনেকগুলো কোম্পানির আইপিও আমরা দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ  দুর্দান্ত ডেটা প্যাক নিয়ে এলো গ্রামীণফোন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে দুই শতাংশ এবং সম্মেলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতেই হবে এমন উক্তি করে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ ও ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে আমরা অটল। এটা ঠিক রাখতেই হবে। আপনি একটি কোম্পানির পরিচালক হবেন, কোম্পানি চালাবেন। কিন্তু দুই শতাংশ শেয়ার রাখবেন না, এটা কেমন কথা। তাহলে আপনার ইন্টারেস্ট কি? খালি বেতন-ভাতা নেয়া, সুবিধা নেয়া। আপনার যদি সেটার পার্ট না হন, তাহলে অন্যদের স্বার্থ রক্ষা করবেন কিভাবে? দুই শতাংশ শেয়ার ধারন, সেটা করতেই হবে।

যতদিন পর্যন্ত ব্যাংকে সারপ্লাস অর্থ থাকবে বা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ভালো কোম্পানি ফান্ড সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে না জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, পুঁজিবাজার আর ব্যাংকিং সেক্টরের মাঝে ব্যাংকিং সেক্টর ছেড়ে কোম্পানিগুলো কেন পুঁজিবাজারে আসবে। ব্যাংকিং সেক্টরে এখন পর্যন্ত ফাইন্যান্সিং খুব সহজ। ভালো কোম্পানিকে লোন দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো গড়াগড়ি করে। আবার ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডও কম। তাহলে কি কারণে পুঁজিবাজারের এই দীর্ঘ সূত্রিতায় এবং নানা রকম জটিলতার মধ্য দিয়ে আসবে। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত

ব্যাংকে সাফিসিয়েন্ট লিকুইট থাকবে, লংটার্ম ফাইন্যান্স করার মতো অবস্থা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ভালো কোম্পানি ফান্ড সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে না। আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের কোনো মিল খুঁজে পাই না জানিয়ে ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ১৯৯৬ বা ২০১০ সালে যখন পুঁজিবাজারে ধস হয়, তখন আমাদের অর্থনীতি খারাপ ছিল না। আবার অর্থনীতি ভালো হলে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়েছে নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, তা নয়। আমাদের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি, কিন্তু পুঁজিবাজারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বললেই চলে।

আরও পড়ুনঃ  ডিমের দামে কারসা‌জি করায় দুই প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা

গত কয়েক বছর যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ভালো কোম্পানি কম। অথচ পুঁজিবাজারের বর্তমান যে অবস্থা, বাজারের মূল সমস্যাই হলো আপনি কোথায় ইনভেস্ট করবেন। ইনভেস্ট করার মতো কোম্পানিতো সামান্য কিছু। ভালো ইন্ডাস্ট্রিগুলো ভালো ব্যবসাগুলো লিস্টিং থেকে দূরে আছে।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ বলেন, গত ১০ বছর দেশের অর্থনীতি ৬ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে ও নিয়মিত মাথাপিছু আয় বেড়েছে। যাতে করে আমাদের জিডিপি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। এই উন্নতির মধ্যেও আমাদের পুঁজিবাজার পিছিয়ে রয়েছে। এর পেছনে পুঁজিবাজারে আসার থেকে না আসা কোম্পানির প্রকৃত অর্থে রাজস্ব সুবিধা বেশি হওয়া অন্যতম কারন হিসাবে রয়েছে। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকির রাস্তা বন্ধ করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস পুঁজিবাজার হলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। যা ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থায়নের মাত্র দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের তথ্যে খুব ভালো করেই উপলব্ধি করা যায়। যেখানে ৯৯ দশমিক ৯৩ অর্থায়ন করা হয়েছে ব্যাংক থেকে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে নতুন ইস্যুর অবস্থা ভালো। ওইসব দেশে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা কোম্পানির হার বেশি।ভারতে

২০২১ সালে ৫১টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি বা ২৫ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। তবে লেনদেনের প্রথমদিনেই ২৫টি বা ২৭ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে গিয়েছিল। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রথমদিন এবং ১ বছরের মধ্যে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যাওয়ার ইতিহাস খুবই কম।

সংবাদটি শেয়ার করুন