করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন শেষ হচ্ছে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাতে। তবে আর বাড়ানো হবে না লকডাউনের সময়সীমা। তবে চলাচলে আগের মতো মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘২৮ এপ্রিল থেকে সবকিছুই শিথিল হতে শুরু করবে। তবে একটা শর্ত থাকবে; শারীরিক দূরত্ব মেনে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আমরা এখনও কিন্তু এর (করোনাভাইরাস সংক্রমণ) মধ্যে আছি।’
লকডাউনের মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় সংক্রমণের হার ও মৃত্যু কমে আসবে বলে আশাবাদী প্রতিমন্ত্রী। তারপরও মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প থাকবে না বলে মনে করছেন তিনি। ‘মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখা গেলে সবাইকে মনে করতে হবে, ওই লোকটি সবার জন্য ঝুঁকি। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে। এক হচ্ছে, তাকে সার্ভিস দেয়া যাবে না। দুই হচ্ছে, তাকে আশপাশের সবাই বলবে, আপনি মাস্ক পরেন।’
এদিন মন্ত্রিপরিষদ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে রোববার থেকে খুলে দেয়া হবে শপিং মল ও দোকানপাট। ঈদ সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা, নিম্ন আয়ের মানুষ জীবন-জীবিকার মতো দিকগুলো বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এটা চলমান থাকুক। কিন্তু আমরা দেখলাম যে, এখানে যারা আছেন, দোকানপাট ও শপিং মলগুলোতে যারা কাজকর্ম করছেন, তাদের সামনে ঈদ। তাদের যে ইনভেস্টমেন্ট, সবকিছু মিলিয়ে তাদের যে মানবিক আবেদন, সবকিছু চিন্তা করেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শপিং মল ও দোকানপাট চালু রাখাসহ যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এখানে শর্ত থাকবে যে, তারা যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেটা তারা শতভাগ মেনে চলবে। গতবারও ওরা অনেক লুজার হয়েছিল এবং সামনে ঈদ আছে। পয়লা বৈশাখ তো তারা মিস করলেন। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ এ খাতের সঙ্গে জড়িত, কর্মচারী হিসেবে তারা কাজ করেন।
২৮ এপ্রিলের পর আস্তে আস্তে সব খুলতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহব্যাপী চলাফেরার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা তো এখানে, ১৪ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ১১/১২ দিন হচ্ছে। এর মধ্যে কিছুটা সুফল পাওয়া গেছে। কিন্তু জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা খোলা রাখবে।’
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সবার মধ্যে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটার মধ্য দিয়ে মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এটাকে আমাদের হানড্রেড পার্সেন্ট ধরে রাখতে হবে। নো মাস্ক, সো সার্ভিস। ‘যেখানেই হোক না কেন, নো মাস্ক নো সার্ভিস। প্রত্যেকটা মানুষকে মাস্ক পরতে হবে। জীবন-জীবিকাকে তো আসলে আমাদের স্বাভাবিক করতেই হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ডিপেন্ড করে তো লাভ হবে না। যে লোকটি হাঁটবেন, তিনিই ভর্ৎসনা করবেন যে, আপনি মাস্ক পরেননি, আপনি একটা অপরাধ করছেন। আপনি সংক্রমণ নিয়ে আমার এখানে আসছেন, আরও চার-পাঁচটা দোকানে যাচ্ছেন, অন্যদের সংক্রমিত করছেন।’
একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করার ওপর সরকার মনোযোগী হতে চায় বলে মন্তব্য তার।
আনন্দবাজার/শহক