ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ১২৪ রানেই বেঁধে ফেলেছেন রিশাদ-মোস্তাফিজ-তাসকিনরা। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় বাকি কাজটি করতে হিমশিম খেতে হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। শঙ্কা উড়িয়ে অবশেষে জয় নিয়েই ফিরেছে বাংলাদেশ। ৬ বল হাতে রেখে লঙ্কানদের ২ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে টাইগাররা।

শনিবার (০৮ জুন) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে তুমুল উত্তেজনার ম্যাচটি নিজেদের করে নিয়ে জয়ের ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে দারুণ এক আশাজাগানিয়া দিন উপহার দিয়েছে মাহমুদউল্লাহ-রিশাদরা।

যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে এমন দিনটা স্বরণীয় হয়ে থাকবে। যেখানে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের শুরুটা করেছে জয় দিয়ে। দিনটির সাক্ষী হয়েছেন হাজারো প্রবাসী সমর্থক। তাদের টেলিভিশন সেটের সামনে উল্লাসে ফেটে পড়া কিংবা দুঃসময়ে নিজেদের ব্যথিত করার দৃশ্য কম আলোড়িত করেনি। অথচ এই ম্যাচের আগে মনে হচ্ছিল সাকিব-শান্তরা খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। কত-শত সমালোচনা তাদের ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আর না যাওয়ার কারণও নেই। সাম্প্রতিক সময়ে পারফরম্যান্স বেশ নেতিবাচক। শুধু দল নয়, অধিনায়কসহ টপ অর্ডার ব্যাটারদেরও দুর্দশা। সেই দলের ওপর বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত ‘কত টনের চাপ’ ছিল, তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। আর আজ কিনা সেই ভারী বোঝা অনেক কষ্টে-সৃষ্টে সরিয়ে নির্ভার হয়েছে সবাই!

আজ (শনিবার) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের জবাব দিতে নেমে শুরুতে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

ম্যাচে চতুর্থ উইকেটে লিটন দাসকে নিয়ে হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয়। হৃদয়ের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে এই জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৩৮ বলে ৬৩ রান। ফলে শঙ্কা কেটে যায় অনেকখানি। ১২তম ওভারের প্রথম ৩ বলে ৩ ছক্কা হাকিয়ে চতুর্থ বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হন হৃদয় (২০ বলে ৪০)। তখন বাংলাদেশের বোর্ডে ৯১ রান। শেষদিকে ১৯ রান নিতে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ৯৯ রানে এলবিডব্লিউ হন লিটন। ১০৯ রানের মাথায় মাথিশা পাথিরানার বলে থার্ড ম্যান অঞ্চলে থিকসানার হাতে ধরা পড়েন সাকিব আল হাসান (১৪ বলে ৮)। এরপর ১১৩ রানে থাকতেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। নুয়ান থুসারাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন রিশাদ হোসেন (৩ বলে ১)। পরের বলেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের বুটে বল লাগলে থুসারার জোরালো আবেদনে আঙুল তোলেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ পক্ষে যায় লঙ্কানদের।

১২ বলে ১১ রান দরকার বাংলাদেশের। দাসুন শানাকাকে ওভারের প্রথম বলেই দারুণ এক ছক্কা হাঁকান মাহমুদউল্লাহ। এতে ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। ওই ওভারে এক ওয়াইড আর শেষ বলে দৌড়ে ২ রান নিয়ে পুরো ১১ রান করে তুলে নেয় টাইগাররা। এতে উচ্ছ্বাসে ভাসেন বাংলাদেশের সমর্থকরা।

এদিন আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা লঙ্কানদের শিবিরে প্রথম আঘাত করেন তাসকিন আহমেদ। দলীয় ২১ রানের মাথায় ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে (৮ বলে ১০) বোল্ড করেন টাইগার পেসার। লঙ্কানদের ডেরায় দ্বিতীয় আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৪৮ রানের মাথায় তিনে নামা কামিন্দু মেন্ডিসকে (৫ বলে ৪) তানজিম সাকিবের ক্যাচ বানান তিনি। আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মোস্তাফিজ। ঝোড়ো ব্যাটিং করা এই ব্যাটারকে ফিফটিবঞ্চিত করেন টাইগার পেসার। ২৮ বলে ৪৭ রান করে ফেরত যান নিশাঙ্কা। চারিথ আশালঙ্কার উইকেট তুলে নেন রিশাদ হোসেন। সাকিব আল হাসানের হাতে তালুবন্দি হওয়ার আগে এই লঙ্কান ব্যাটার করেন ২১ বলে ১৯ রান। পরের বলেই লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে (১ বলে ০) নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান লেগস্পিনার রিশাদ। তবে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা টিকে থাকায় চেষ্টায় থাকলে বেশিক্ষণ পিচে থাকতে পারেননি। ২৬ বলে ২১ রান করা এই ব্যাটার রিশাদের তৃতীয় শিকার হন। তাসকিনের বলে বিহাইন্ড দ্য উইকেটে ক্যাচ হন দাসুন শানাকা (৭ বলে ৩)।

মাহিশ থিকসানাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি মোস্তাফিজ। ৩ বল খেললেও এই লঙ্কান ফেরত যান খালি হাতে। তানজিম হাসান সাকিবের শিকার হওয়ার আগে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ করেন ১৯ বলে ১৬ রান। এতে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১২৪ রান। ৩টি করে উইকেট নেন রিশাদ ও মোস্তাফিজ। ২ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। ১টি উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব।

ম্যাচ শেষ হতেই নাজমুল হোসেন শান্তর মুখে চওড়া হাসি। অনেকটা যেন দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে জোরে নিশ্বাস নিতে পারার স্বস্তি। সাম্প্রতিক সময়ে দলের পারফরম্যান্স, ধেয়ে আসা সমালোচনার ঢেউ মিলিয়ে প্রবল চাপ মাথায় নিয়ে নেমেছিলেন তারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারলে সেসব তিক্ত পরিস্থিতি হতো দ্বিগুণ। এই আবহের মাঝে লো স্কোরিং ম্যাচে দোলাচলও তৈরি হলো কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে অধিনায়ক বললেন, এমন চাপ তার ক্যারিয়ারে আগে কখনো আসেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন