সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ইংলিশরা প্রথমবার ট্রফি জিতেছে ২০১০ সালে।
ধুঁকতে ধুঁকতে ফাইনালে ওঠা পাকিস্তানকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল মূলত। তুলনা করা হচ্ছিল ইমরান খানের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতা দলটির সঙ্গেও। যদিও মিরাকল অব নাইন্টি টুর মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিরাকল অব টুয়েন্টির আশায় ছিলেন অনেকে। কিন্তু ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড তা হতে দিল না।
২০১৬ সালের ফাইনালের খলনায়ক বনে যাওয়া ইংলিশ অলরাউন্ডার তার দায়মোচন করতে বেছে নিলেন মেলবোর্নের এই ফাইনাল। ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক কলকাতায় ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যার এক ওভারে পরাজয় দেখেছিল ইংলিশ দল। ফাইনালে ৪ বলে ৪ ছক্কায় ক্যারিবীয়দের আরেকটি রূপকথা লেখা হয়েছিল স্টোকসের শেষ ওভারেই। আর এবার বেন স্টোকসের ব্যাটেই জয় নিশ্চিত হয়েছে ইংল্যান্ডের।
১৩৮ রানের লক্ষ্যটা মামুলি মনে হলেও পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপে সেটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ইংলিশদের সামনে। প্রথম ওভারে অ্যালেক্স হেলসের (১) উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দেন শাহীন। ফিল সল্ট আর বাটলার মিলে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছেন। শুরুতে সল্টকে (১০) ফিরিয়েছেন। তারপর বিপজ্জনক বাটলারকেও গ্লাভসবন্দি করালে অন্যরকম ইঙ্গিত মিলতে থাকে। কিন্তু কঠিন চাপে পড়ে যাওয়া দলটিকে দিশাহীন হতে দেননি বেন স্টোকস। হ্যারি ব্রুককে নিয়ে শুরুতে ৩৯ রান যোগ করেছেন।
শাদাব খান ২৩ বলে ২০ রান করা ব্রুককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলে ইংলিশদের চাপ বাড়ে আরও। কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো স্টোকস দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে কক্ষপথচ্যুত হতে দেননি দলকে। মঈন আলীকে নিয়ে ৪৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটিতেই জয়টাকে দৃষ্টিসীমায় নিয়ে আসেন। ১৮.২ ওভারে মঈন যখন আউট হন, তখন ১১ বলে ৬ রান প্রয়োজন ইংল্যান্ডের। মঈন দলকে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে দিয়ে ১২ বলে ১৯ রানে ফিরেছেন। তারপর তো ওই ওভারের ষষ্ঠ বলেই স্টোকসের ব্যাটে আরেকটি ইতিহাস লেখা হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। পাকিস্তানের হয়ে ২৩ রানে দুই উইকেট হারিস রউফের। একটি করে নিয়েছেন শাহীন, শাদাব ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।
৪৯ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকা বেন স্টোকস আবারও প্রমাণ করলেন কঠিন চাপের সময় তার তুলনা শুধু তিনিই।
শুরুতে টস হেরে বাবর আজমের দল ৮ উইকেটে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে। বলা যায় টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্তটা কাজে দিয়েছে ইংল্যান্ডের। পাকিস্তানকে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করতে দেয়নি। শুরু থেকেই বাবরদের চাপে রাখতে পেরেছে। ৩ ওভারে হয়নি একটি বাউন্ডারিও। পঞ্চম ওভারে মোহাম্মদ রিজওয়ান (১৫) কারানের বলে বোল্ড হলে পাওয়ার প্লেতে চাপের মাঝে থেকে ব্যাটিং করেছে পাকিস্তান। তাতে ৬ ওভারে ১ উইকেটে যোগ হয়েছে ৩৯। মোহাম্মদ হারিস নেমেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। আদিল রশিদের বলে ৮ রান করে দলীয় ৪৫ রানে বিদায় নিয়েছেন। শুরু থেকে প্রান্ত আগলে ছিলেন শুধু বাবর। শান মাসুদ আসার পর দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডের গতি বাড়িয়েছেন তারপর। ১২তম ওভারে বাবর আজম আরেকটু হাত খুলতে যাচ্ছিলেন, তখন বাজে শটে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন আদিল রশিদকে। তাতে ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। দ্রুত ইফতিখার আহমেদের উইকেটের পতন হলে আবার চাপ বাড়ে তাদের।
পরে শান মাসুদ ও শাদাব খান ৩৬ রানের জুটি গড়ে স্কোরটা ১৭ ওভারে ১২১ রানে নিয়ে গেছেন। এই জুটি আরও কিছুক্ষণ থাকলে ইংল্যান্ডের বিপদ বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। ১৭তম ওভারে শান মাসুদকে সাজঘরে পাঠিয়ে দলকে উদ্ধার করেন। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করা এই ব্যাটার লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। পরের ওভারে মাসুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন শাদাব খানও।
১৪ বলে ২ চারে ২০ রান করা শাদাব ক্রিস জর্ডানের ক্যাচে পরিণত হয়েছেন। এই দুই ব্যাটারের উইকেট তুলে নিয়েই পাকিস্তানের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করার পথটা কঠিন করে তোলেন ইংলিশ বোলাররা। চাপে থাকায় মোহাম্মদ নওয়াজ (৫), মোহাম্মদ ওয়াসিমও (৪) দ্রুত ফিরেছেন। তারপরও ৮ উইকেটে ১৩৭ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তান। ডেথ ওভারে স্যাম কারান ছিলেন সবচেয়ে সফল। ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। মাঝের দিকে সফল আদিল রশিদ ২২ রানে নিয়েছেন দুটি। ২৭ রানে ক্রিস জর্ডানও দুটি উইকেট নিয়েছেন।
আনন্দবাজার/কআ