ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১লা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোশাররফের মৃত্যুতে শোকাহত ক্রিকেট অঙ্গন

ক্যান্সারের সাথে লড়েছেন দীর্ঘ তিন বছর। তাকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করা হলেও সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে পরপাড়ে পাড়ি জমান জাতীয় দলের সাবেক স্পিনার মোশাররফ হোসেন রুবেল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার চলে যাওয়াতে শোকের হাওয়া বইছে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে।

মঙ্গলবার রাতে হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তার জানাজার নামায অনুষ্ঠিত হয়। সতীর্থকে শেষ বিদায় জানাতে মাঠে এলেন মাশরাফি,মুশফিকরা। এসেছেন কোচ, ভক্ত, স্বজন এবং সংগঠকেরাও। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় মোশাররফকে।

মোশাররফের স্ত্রী ফারহানা রূপা প্রায় সময়ই বলেছেন, ক্যান্সারের সাথে তাদের এই লড়াইয়ে শুরু থেকেই নানাভাবে পাশে ছিলেন মাশরাফি। বন্ধুর বিদায়ে ফেইসবুকে মাশরাফি লিখেছেন, ভালো থাকিস বন্ধু…।

তার স্মৃতিচারণ করে সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান বলেন, একটা ভালো মানুষের যেসব গুণ থাকা দরকার রুবেলের সব ছিল। ভালো ক্রিকেট খেলতো। ভালো মানুষ। শিক্ষিত ছেলে। ভালো পরিবারের ছেলে। উদাহরণ দেওয়ার মতো একজন মানুষকে আজ আমরা হারালাম।

আজ বুধবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন সাকিব। বিমান বন্দরে সাকিব জানান, পথেই তিনি খবরটা পেয়েছেন আর জীবনের কঠিন সত্যটিও উপলব্ধি করেছেন আরেকবার।

‘আসলে খুবই দুঃখজনক। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, নিউজ দেখছিলাম যে উনি মাত্র বাসায় গেলেন, একটু ভালো অনুভব করছিলেন। ভাবলাম যে কোনোভাবে বুঝি সারভাইভ করলেন। আরেকজনের সঙ্গে কথাও বলছিলাম এটা নিয়ে যে, হয়তো কম বয়স দেখে সারভাইভ করতে পারছেন। তবে হঠাৎ করে খবরটা পাই যখন প্লেনে ছিলাম। খুবই দুঃখজনক। তবে জীবনে যে কোনো কিছুর গ্যারান্টি নেই, সেটির একটি প্রমাণ।’- যোগ করেন তিনি।

এছাড়াও সাবেক এই ক্রিকেটারের বিদায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজসহ বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে।

২০১৯ সালে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোশাররফ। এরপর আর মাঠে ফেরা হয়নি তার। এর আগে সাকিব আল হাসান-আব্দুল রাজ্জাকদের পূর্বে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের অবসরের পর জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি।

তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি ছিল ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ওয়ানডে সিরিজে।

কিন্তু কয়েক মাস পরেই কথিত বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের লিগ, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে যোগ দেয়ায় রুবেল বেশিদিন খেলতে পারেননি জাতীয় দলে। তখন আইসিএলগামী ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অবসরের চিঠিও দিয়েছিলেন।

২০০৯ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তখন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেন মোশাররফ রুবেল।

২০০১-০২ মৌসুম থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন এই বাহাতি স্পিনার।

রুবেল ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটেই অবদান রেখেছেন।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

যদিও মূলত ছিলেন বাহাতি স্পিনার কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার নামের পাশে রয়েছে ৩৩০৫ রান, সেঞ্চুরিও করেছেন দুটি, ১৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি ৩৯২টি উইকেট নিয়েছিলেন।

ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ার আগে শেষবার ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছিলেন মোশাররফ রুবেল।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে মারা যান দেশের প্রথম ওয়ানডে পেসার সামিউর রহমান সামি। একইদিনে জাতীয় দলের সাবেক দুই ক্রিকেটারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে।

আনন্দবাজার/টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন