আগের বছরের আগস্ট মাসে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ ঘোষণা করে। আর আমানতের সুদ হার স্থিরিকৃত হয় ৬ শতাংশ। তার আগে তফসিলি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) স্বেচ্ছায় সরকারপ্রধানের কাছে এই প্রতিজ্ঞা দেয়। এজন্য তারা সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা আদায় করে। কিন্তু স্বেচ্ছায় দেওয়া প্রতিজ্ঞা এক বছর পেরিয়ে যাবার পরও কার্যকর করতে পারেনি।
ব্যাংকগুলো বিচ্ছিন্নভাবে এটি কার্যকরের কথা জানালেও সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, ছয়-নয় শতাংশ সুদহার কার্যকর হয়নি। খোদ প্রধানমন্ত্রীও সুদহার কার্যকর করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কার্যত কোনো উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শিল্প ও বাণিজ্যের স্বার্থে ছয়-নয় শতাংশ সুদহার কার্যকর নিয়ে নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীরা। তারা বলছেন, স্বল্প সুদে আমানত না পেলে কোনোভাবেই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী জানান, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার করতে আমাদের এক অঙ্ক সুদহার কার্যকর করতে হবে। লম্বা সময় চলে গেছে। এটি আমরা কার্যকর করতে পারছি না। এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। তাই আমাদের সুদহার কমাতেই হবে।
প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে কার্যত সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকে প্রধান করে বিশেষ এই কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীদের রাখা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, গঠিত কমিটি সাত দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে। সেখানে ছয়-নয় শতাংশ সুদহার কার্যকর করার বাধাগুলো উঠে আসবে। এজন্য সুপারিশও করবে কমিটি। সে মোতাবেক আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। পহেলা জানুয়ারি থেকে আমরা শিল্পখাতে এক অঙ্ক সুদহার কার্যকর করতে চাই। এ জন্য একটি প্রজ্ঞাপনও ইস্যু করা হতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ার।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী জানান, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জিডিপি হ্রাস পেলেও আমাদের দেশের জিডিপি কমার কোনো ভয় নেই। কারণ আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কখনো কমবে না, বরং বাড়বে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের কারণে তারা বিনিয়োগ করতে পারছেন না। ক্ষেত্র বিশেষে ১৫/১৬ শতাংশ সুদ ধার্য করা হচ্ছে। ফলে দেশে বিনিয়োগে অনেকটা স্থবিরতা চলছে।
আনন্দবাজার/ইউএসএস