ঢাকা | শুক্রবার
২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনশক্তি রপ্তানিতে দায়িত্বশীল হতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের সোয়া কোটি মানুষ প্রবাসী। বিশ্বের দেড়শ দেশে ছড়িয়ে আছে এদেশের মানুষ। জানলে বুকটা ভরে যায়। আরও ভাল লাগে যখন হিসেব পাওয়া যায় এই প্রবাসীরা আমাদের কত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। তাদের পাঠানো টাকায় বাড়ছে আমাদের রিজার্ভ। বাড়ছে জিডিপির আকার।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অদক্ষ জনশক্তি বিদেশে যেত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একেবারে শ্রমিক হিসেবে জনশক্তি যেতে শুরু করে। এরপর আস্তে আস্তে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যাওয়া শুরু হয়। যা খুব একটা আশানুরূপ নয়। মাত্র গত দু’দশক ধরে অঅর্থনীতির ভারসাম্য নির্ধারণ করেছে প্রবাসী আয়। দৈনিক আনন্দবাজারের প্রধান শিরোনামে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এখন প্রতিবছর আট থেকে নয় লাখ কর্মী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এসব কর্মী অদক্ষ হওয়ায় তাদের আয় তেমন বাড়ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ফলে রেমিট্যান্স কম আসছে।

বাংলাদেশের যত নাগরিক বিদেশে অবস্থান করে তাদের তিন ভাগের একভাগও যদি দক্ষ হত তবে এই রেমিট্যান্সের আকার হত কয়েক গুণ। এই জনশক্তি রপ্তানিতে দক্ষ করে পাঠানোর বিষয়টি সরকারিভাবে উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আমাদের দেশের জনশক্তি বিভিন্ন দেশেই যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।সে অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। কিন্তু সে সব জনশক্তি দক্ষ না হওয়ায় আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়টি ভাবতে হবে। দক্ষ জনশক্তি যাতে রপ্তানি হয় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এতে রেমিট্যান্স অনেক বেড়ে যাবে। জিডিপির আওতাও বাড়বে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। এভাবে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে পরষ্পর বিরোধী নানা অভিযোগও রয়েছে। যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের অভিযোগ একরকম আবার সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ আরেক রকমের। যেসব কারণে অদক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। সে বিষয়গুলোর দিকে সরকারিভাবেই নজর দিতে হবে। যাতে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে যায় এবং আয়ের পরিমাণ বাড়ে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়।

দেশে রেমিট্যান্স আসলেই চলবে না এই রেমিট্যান্স কাজে লাগাতে হবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বিনিয়োগ হতে হবে। শুধু ভোগে ব্যবহার হলে হবে না। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিদেশে বসবাসরত স্বজনের পাঠানো অর্থ বিনিয়োগ না করে শুধু ভোগেই শেষ করেন। যা দেশে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে বলেছেন, দেশের অনেক মানুষ জমিজমা, সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ থেকে উত্তরণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা বন্ধে জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ যাতে সহজে জানতে পারেন, প্রতারকের খপ্পরে না পরেন সে জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানোর তাগিদ দেন। দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে বৈদেশিক আয়ের বিকল্প নেই। রেমিট্যান্স যত বেশি বাড়বে দেশের অর্থনীতি ততটাই শক্তিশালী হবে। ফলে রেমিট্যান্স বাড়াতে যত ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন তা সরকারি পর্যায়ে নিতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে জোর দিতে হবে। যে দেশে যে ধরনের জনশক্তি প্রয়োজন সে ধরনের জনশক্তি সেই দেশে পাঠানোর ব্যাপারে নজর দিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন