ঢাকা | রবিবার
২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌখামারে যুবকের স্বপ্ন

মৌখামারে যুবকের স্বপ্ন

ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্ত ঘেষা হরিপুর উপজেলার বকুড়াল গ্রামের যুবক ফয়সাল আহমেদ নাহিদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র সে। পড়াশোনার পাশাপাশি মৌ খামার করে হয়েছেন নতুন উদ্যোক্তা। এ খামারে এখন দেখছেন মধুময় সম্ভাবনা।

নাহিদের গড়েতোলা মৌ খামারে এক বছরেই মধু উৎপাদনের প্রসার ঘটেছে ৫ গুণ। তার উৎপাদিত মধু কিনতে রোজ ক্রেতা আসেন বাড়িতে। আবার কুরিয়ারের মাধ্যমে মধু কিনতে বিভিন্ন ক্রেতাও  আগ্রহ দেখায়। ক্রেতারা তার উৎপাদিত মধু কিনছেন প্রতি কেজি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। 

দৈনিক আনন্দবাজারের সঙ্গে আলাপকালে নাহিদ জানান, পিতার মৃত্যর পর নিজ গ্রামে মৌ মাছি চাষ শুরু করেন তিনি। এর আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মৌ খামারের উপর। রপ্ত করা প্রশিক্ষণ কাজে লাগান মৌ মাছি দিয়ে মধু  আহরণের জন্য।

টিউশনের জমানো ৭ হাজার টাকায় কেনা দুটি মৌমাছির বাক্স দিয়ে তার উদ্যমি যাত্রা শুরু হলেও এখন তার রয়েছে ১০ টিরও বেশি মৌ বাক্স। যা থেকে  প্রতি মৌসুমে প্রতিটি বাক্স থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার মধু পান তিনি। গ্রামের, সরিষা ক্ষেত, লিচুর মুকুল, কুমড়ো ক্ষেত থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন নাহিদ। 

মধু সংগ্রহের পক্রিয়া সম্পর্কে নাহিদ বলেন, মৌবক্স ফসলের মাঠে রেখে দেই। দিনের বেলা মৌ মাছিগুলো ফুল থেকে নেকটার (ফুলের রস) সংগ্রহ করে এবং প্রসেসিং এর মাধ্যমে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মধুতে পরিণত করে। নেকটার সংগ্রহের সময় তাতে পানির পরিমাণ থাকে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। পরবর্তীতে সেটা সম্পূর্ণ হাতে স্পর্শ ছাড়া মধু সংগ্রহের মেশিন দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি মৌ খামার শুরু করেছি। শুরুটা শখের বশে হলেও এতে আশা করছি আমি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারবো। দিনে দিনে আমার স্বপ্নের প্রসার ঘটছে। এখন আমার লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও অর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছি। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যার শুরুটা মূলত এখান থেকেই করেছি। আমি প্রত্যাশা করি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ও সহযোগিতা পেলে আমার স্বপ্ন দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হবে। 

মধু ক্রেতা ডা: আনসারুল ইসলাম বলেন, বাজারে খুব একটা খাঁটি মধু মিলেনা। নাহিদের কাছে খুব সহজেই খাঁটি মধু পাই। আমি নিয়মিত তার খামার থেকে মধু কিনছি। স্থানীয়  আলম বলেন, নাহিদের মৌ খামারটি বেশ আলোচিত উপজেলায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি তার এই মৌ খামার তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবি ও পরিশ্রমী।

হরিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নইমুল হুদা বলেন, মৌ খামার একটি দারুণ উদ্যোগ। এতে পরাগায়ন ঘটে এবং ফসলের ফলন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। ভালো ফলনের জন্য আমরা কৃষককে ফসলের মাঠে দুটি করে মৌ বাক্স রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। 

সংবাদটি শেয়ার করুন