- মৎস্য কর্মকর্তাদের নিঃস্ক্রিয়তার অভিযোগ
- ভোলার ১০ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ-ট্রাকে পাচার
ভোলা থেকে ১০টি নৌ রুটে-বরিশাল, যশোর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার উদ্দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চে ও ট্রাকে তুলে দিচ্ছে শত শত টন ঝাটকা ইলিশ। ওই এলাকার বিভিন্ন বাজারে তা চাপিলা, আবার কোনো কোনো বাজারে জাটকা হিসেবেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। তবে দায়িত্বশীল মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের লোভের মোহে নির্বিচারে জাটকা নিধনে ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে শংকা মৎস্য বিশেষজ্ঞদের। সাধারণভাবে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের অপরিণত ইলিশ জাটকা নামে পরিচিত।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নভেম্বর থেকে আট মাস নদীতে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। ওই সময়ের মধ্যে জাটকা ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় বা মজুদ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে নেতারা, মৎস্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তাদের যোগশাজসে জেলেদের দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন অব্যাহত রেখেছে। রাতভর জাটকা ধরার পর মহাজনরা তা মনপুরা-ঢাকা, ভোলা-ঢাকা, ভোলা-বরিশাল ১০টি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চে ও ট্রাকে বরিশাল, যশোর, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকায় প্রতিদিন শত শত টন ঝাটকা ইলিশ পাচার করছে।
এদিকে রবিবার রাতে ঝাটকা বোঝাই একটি ট্রাকে করে ভোলার কোষ্টগার্ড এর আগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ হাসান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরার অপরাধে ৭৮ জেলেকে আটক করে। এ সময় জব্দ করা হয়েছে নিষিদ্ধ ৬১ বেহুন্দিজাল, একটি পাইজাল, ৩০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৪০ মণ জাটকা। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নদীতে অভিযানে যাওয়ার আগে মৎস্য বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা মাছ ঘাটরে দালাল ও বেপারীদেরকে ফোনে খবর পাঠিয়ে দিলে জেলেরা অবৈধ জাল ও ঝাটকা ইলিশ নিয়ে অন্যত্র চলে যায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ বলেন, জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযান চলছে। এরই মধ্যে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাটকা নিধন বন্ধ করতে নদীতে অভিযানের পাশাপাশি জাটকার ফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত বেহুন্দি (বিশেষ ধরনের জাল) অপসারণে বিশেষ কম্বিং অপারেশনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার উপপ্রধান কর্মকর্তা মাসুদ আরা মমি বলেন, ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ জাটকা নিধন। নিষেধাজ্ঞার আট মাস জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ বা বহন করলে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ কর্মকর্তা বলেন, এখন ধরা পড়া জাটকার সাইজ দুই থেকে তিন ইঞ্চি। ফলে বাজারে এটি চাপিলা হিসেবে বিক্রি করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। যে সব মৎস্য কর্মকর্তা ঝাটকা ইলিশের সাথে জড়িত হয়ে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে শত শত টন অবৈধ ঝাটকা ইলিশ জদ্ধ করেছি এবং অভিযান অব্যহত আছে। তবে লঞ্চে কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।
ভোলা-বরিশাল, ভোলা-ঢাকা ও মনপরা-ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বিভিন্ন লঞ্চে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার টন ঝাটকা ইলিশ পরিবহন করা হয়। যদিও কয়েকদিন আগে অবৈধ জাটকার চালান ঢাকায় নেয়ার সময় তাছরিফ লঞ্চে অভিযান চালিয়ে ৬৩ মণ জাটকা জব্দ করা হয়, ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে যাত্রীবাহী ফারহান-৫ নামের লঞ্চে অভিযান চালিয়ে ১২৫ মণ জাটকা জব্দ করা হয়। কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার (বিএন) বলেন, লঞ্চে অভিযানে মাছের প্রকৃত মালিকদের পাওয়ায় যায়না। তবে কোস্টগার্ড বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা সিনিয়র সহ সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, বড় ইলিশের ভেতর লুকিয়ে এসব জাটকা লঞ্চে তোলা হচ্ছে। লঞ্চের কর্মীদের তা যাচাই করার সুযোগ নেই। এখন তারা বিষয়টি বুঝতে পারছেন। ইলিশের সঙ্গে অবৈধ জাটকা বহন বন্ধ করতে তারা লঞ্চের কর্মচারীদের আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।