- উঠতি আলু চাষে ক্ষতির শঙ্কা
- পানির নিচে ডুবে থাকা আলু বীজ হিসেবে রাখার উপযোগি নয়
- শেষ মাঘের বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ বলছেন কৃষি কর্মকর্তরা
‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ’-খনার এই বচন অনুযায়ী মাঘ মাসের শেষে বৃষ্টি হলে ফল-ফলাদির বেশ উপকার হয়, ফসলে ভরে যায় দেশ। শীতের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে বসন্ত দ্বারপ্রান্তে। মাঘের শেষ সপ্তাহে গত শুক্রবার ও শনিবার আকস্মিক অবিরাম বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ার কারণে দেশের আলু উৎপাদন এলাকা খ্যাত রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় উঠতি আলুক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা।
গত দু’দিনের বর্ষণে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির আলুক্ষেতে পানি জমে যায়। এছাড়া উঠতি সরিষা, ধানের চারাসহ নানা ফসলের ক্ষতির শঙ্কাও করছেন তারা। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, আকষ্মিক ভারি বর্ষণে কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে পানি জমে গেলে দিশেহারা হয়ে পড়ে চাষিরা। পরে সেই নেমে যায়। তবে আলুর ক্ষেত্রে কয়েকদিন ডুবে থাকলে তা পচে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তেমন পরিস্থিতির শঙ্কা নেই উল্লেখ করে সূত্র জানায়, এই বৃষ্টি রবি মৌসুমের গম, ভ’ট্রা, রসুন, পেঁয়াজসহ বোরো ধানের উপকারে আসবে। বিশেষ করে আমের জন্য এই বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আমের মুকুল আসার আগ মুহূর্তে এমন বৃষ্টি একদিকে যেমন মুকুল আসতে সহায়ক হবে, তেমনি খরচ কমবে আমচাষিদের। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, মাঘ মাসে এ ধরণের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ঘটনা বিরল। দু’দিনে রংপুরে ৬৪ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
সরেজমিন রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শনিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে বিশেষ করে নিচু এলাকায় আলু ও সরিষা ক্ষেত পানিতে ভরে গেছে। জমিতে থাকা উঠতি আলুতে পচন ধরার আশঙ্কায় চাষিরা ক্ষেত থেকে পানি অপসারণের চেষ্টা করছেন। নগরীর চব্বিশ হাজারী, মাহিগঞ্জ, রঘু কলাবাড়ি এলাকার চাষিরা জানান, এখন জমিতে পানির প্রয়োজন নেই। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের আলু ক্ষেত থেকে তোলার কথা। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ফলন ভালো হলেও এ বছর আলুর বাজারে তেমন দাম নেই। তার ওপর দুই দিনের বৃষ্টিতে আলু নিয়ে শঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। আলু চাষি আব্দুর রহমান ও জফুর আলী জানান, তারা পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তাদের আলুক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, এই অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুর জেলায় আলু চাষ হয়েছে ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান জানান, এবার রংপুর বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি উঠলেও এখন পর্যন্ত তেমন ক্ষতির শঙ্কা নেই। তবে নিচু এলাকায় কয়েকদিন পানি জমে থাকলে সেখানে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। আর সেই আলু বীজ হিসেবে রাখার উপযোগি হবেনা। এ ব্যাপারে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাঘ মাসের শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ায় আমের লাভ হয়েছে। কারণ, মুকুল আসার আগ মুহুর্তে আমবাগানে প্রচুর পরিমাণে সেচ দিতে হয়। পর্যাপ্ত সেচ দিলে গাছে মুকুল ফোটে। তাই এই সময়ের বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ। এখন পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। পানি পাওয়ায় আরও দ্রুত তা ফুটে বের হবে। রংপুরের মিঠাপুকুরে এই অঞ্চলের জনপ্রিয় হাড়িভাঙা আম বাগানের মালিক আব্দুস সালাম জানান, প্রতি বছর বাগানে সেচ বাবদ চাষিদের বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। সেই খরচ কিছুটা হলেও বাঁচবে। মাঘের শেষে এই বৃষ্টিতে লাভবান হবে আমচাষিরা।